'বিচারপতি জয়নুলকে নিয়ে চিঠি সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা খর্ব করেছে'
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ | ১৭:১০
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতি অনুসন্ধান বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেওয়া চিঠির বৈধতা নিয়ে রুল সাত দফা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের চিঠিটি জনমনে সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা খর্ব করেছে। ওই চিঠি জনগণের মধ্যে এই বার্তা দিয়েছে যে, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফৌজদারি কর্মকাণ্ডের দায়মুক্তি পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তা-ও শুধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্বকাল পর্যন্ত। তাই বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে আপিল বিভাগের প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে দেওয়া চিঠিটি একটি দাপ্তরিক যোগাযোগ; এটি কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের মতামত বলে বিবেচিত হতে পারে না।'
বিচারপতি জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে দুদকের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া আদৌ সন্তোষজনক নয়—উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, 'দীর্ঘ সাত বছরেও তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।'
দুদকসহ অন্যান্য তদন্ত সংস্থাকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, 'কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত বা অনুসন্ধান পরিচালনায় সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা এজেন্সির বাড়তি সতর্কতা ও তদারকি থাকা উচিত। কারণ এর সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার বিভাগের মর্যাদার পাশাপাশি বিচারের মান, জনগণের আস্থা এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেটি জড়িত থাকে।'
গত সেপ্টেম্বরে সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতির অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেওয়া চিঠি নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই চিঠির বরাত দিয়ে সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। এর জবাবে ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদকে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
ওই চিঠিতে বলা হয়, 'বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দেওয়া রায় সবার ওপর বাধ্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার দেওয়া রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না।'
৯ অক্টোবর ওই চিঠি এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনীজীবী বদিউজ্জামান তফাদার। এরপর ওই দিনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে ওই চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। পরে রুল শুনানির জন্য হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনজন অ্যামিকাস কিউরিও (আইনি বিষয়ে মতামত প্রদানকারী) নিয়োগ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার রায় দেন হাইকোর্ট।
আদলতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন।
রায়ের পর খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, 'এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, এ ধরনের চিঠি দেওয়া অবৈধ, যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এর ফলে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ব্যাপারে দুদকের অনুসন্ধান চালাতে বাধা নেই।'