ঝামেলা এড়াতে 'জিম্মি' জীবন
সাহাদাত হোসেন পরশ বকুল আহমেদ
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৮ | ১৯:৪৩
গত ২৬ জানুয়ারি ভোরের কথা। খুলনার সোনাডাঙ্গার মোটরপার্টস ব্যবসায়ী জাহিদুর
রহমান ইব্রাহীম (৪৫) রাজধানীর সায়েদাবাদ রেল গেট থেকে দয়াগঞ্জ
ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায় ক্ষতবিক্ষত হন ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে। প্রাণে
বাঁচতে রক্তাক্ত শরীর নিয়েই প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দূরের সালাউদ্দিন
স্পেশালাইজড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দীর্ঘ সময়
যথাযথ চিকিৎসা ছাড়াই সেখানে পড়েছিলেন তিনি। এরপর ওয়ারী থানা পুলিশের একটি
গাড়িতে করে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার মৃত্যু
ঘটে।
ঘটনার পর সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্নেষণ করে
দেখা যায়, রক্তমাখা শরীরে উদভ্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালের দারোয়ানকে ডাকছেন
ইব্রাহীম। এরপর দারোয়ান ঘুম থেকে ডেকে তোলেন চিকিৎসককে। খানিকক্ষণের মধ্যেই
সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত
জানানো হয়। ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালের একজন দারোয়ান একটি সিএনজি অটোরিকশা
ডাকছেন। তবে অটোরিকশাচালক কিছু একটা বলে ইব্রাহীমকে না নিয়েই চলে যান
সেখান থেকে। ইব্রাহীমকে এ সময় রক্তভেজা শরীরে একটি চেয়ারে বসে পড়তে দেখা
যায়। এরপর দারোয়ান এক রিকশাচালককে ডেকে আনেন। এরই মধ্যে খবর পেয়ে সেখানে
পুলিশ আসে। পরে কনস্টেবল রাজ্জাক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন
ইব্রাহীমকে।
ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনার দিন ভোর সাড়ে ৪টার
দিকেই না ফেরার দেশে চলে যান ইব্রাহীম। নিহত ইব্রাহীমের দুলাভাই আবদুল হক
শুক্রবার সমকালকে বলেন, সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়ার পর যদি
চিকিৎসা দেওয়া হতো, তা হলে ইব্রাহীম বেঁচে যেত। এছাড়া পুলিশকে খবর দেওয়া
হলে তারা হয়তো আরেকটু আগে হাসপাতালে যেতে পারত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাও
করেনি। এমন কষ্টের কথা কাকে বলব। শুনেছি একটি প্রতিষ্ঠান এ ঘটনায় ওই
হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। খুলনায় থাকায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ
রাখা সম্ভব হয়নি।
কোনো অস্বাভাবিক ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে গিয়ে যথাযথ
চিকিৎসা না পাওয়ার এমন মর্মন্তুদ ঘটনা শুধু ইব্রাহীমের ক্ষেত্রেই নয়, আরও
অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটছে। সমকালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে- প্রায়ই রাজধানীর
বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুতর আহত রোগীকে নেওয়ার পর তাদের চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরের
হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নেওয়ার আগেই কিংবা নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন। সঙ্গত
কারণেই প্রশ্ন উঠছে- যেসব হাসপাতাল জরুরি চিকিৎসা না দিয়ে এভাবে সংকটাপন্ন
আহত ব্যক্তিদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তারা কি পেশাগত দায়িত্ব সততা ও
নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছে? তারা কি মেডিকেল এথিকস ভঙ্গ করছে না?
দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনিক ও পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অনেক
হাসপাতালই গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে
আসছে। অনেক সময় কৌশলে রোগীকে হাসপাতালে না রেখে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল
কিংবা অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত কেউ
মারামারি বা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনায় জড়িয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে
রোগীর টিকিটের গায়ে লেখা হয়, 'পুলিশ কেস'। চিকিৎসা-পরবর্তী সময় সনদ দেওয়া ও
আদালতে ডাক্তারদের হাজির হওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অনেক
হাসপাতালই এসব টিকিটধারী সংকটাপন্ন রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায়
ফেলে রাখেন। পরে পুলিশের কেউ যোগাযোগ করলেই কেবল চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, পুলিশ কেসের ক্ষেত্রে ঘটনার শিকার ব্যক্তির চিকিৎসার
পাশাপাশি পরে ঘটনাসংশ্নিষ্ট চিকিৎসা সনদ দিতেও অধিকাংশ ডাক্তার গড়িমসি
করেন।
পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তাও সমকালকে জানান, অনেক সময়ই মারামারি
বা কোনো ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তিকে বেসরকারি হাসপাতালে নিলে 'ঝামেলার'
আশঙ্কায় সেখানে তাকে রাখা হয় না। আত্মহত্যার চেষ্টাকারী কাউকেও প্রাথমিক
চিকিৎসা দিতে চায় না অনেক হাসপাতাল। যদিও পরে পরীক্ষা করে জানা যায়, শুরুতে
চিকিৎসা পেলে পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তির বাঁচার সম্ভাবনা ছিল।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের এক আদেশে সব হাসপাতালেই জরুরি বিভাগ
রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের আদেশে বলা হয়, জাতীয় সড়ক
নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা ২০১৪-১৬ অনুসারে রাষ্ট্রের সব হাসপাতাল ও
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জরুরি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা
নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে। জরুরি
চিকিৎসাসেবা দিতে এবং চিকিৎসা পেতে বাধা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কোথায়
অভিযোগ করবেন সে বিষয়ে নীতিমালা তৈরি ও গণমাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও
নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের এ নির্দেশনার পরও অনেক হাসপাতালের জরুরি
চিকিৎসাসেবা নিয়ে উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন।
দেশ-বাংলা হাসপাতাল :গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কিশোর রাকিব শনির
আখড়ার দনিয়া ক্লাব সংলগ্ন সড়কে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। ছিনতাইকারীরা তার
বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার। প্রতিবেশী বড় ভাই
সম্রাট আকবরসহ কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শনির আখড়ায় দনিয়ার দেশ-বাংলা
হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায়
আহত হওয়ায় তাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে সম্রাট আকবর সমকালকে
বলেন, রক্তাক্ত রাকিবকে তারা দেশ-বাংলা হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার বিবরণ
শুনে চিকিৎসকরা তাদের জানান, এই রোগীর চিকিৎসা এখানে করানো যাবে না। তাকে
ঢাকা মেডিকেলে নিতে হবে। তারা তখন রাকিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
নিয়ে যান। রাকিবের বাবার নাম মোশাররফ হোসেন। বাসা দক্ষিণ দনিয়ায়।
এ বিষয়ে গত ২০ মার্চ সরেজমিনে দেশ-বাংলা হাসপাতাল গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত
ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা হয়। হাসপাতালের সহকারী মেডিকেল অফিসার সাইফুল
ইসলাম ৩১ জানুয়ারি দায়িত্ব পালন করা দু'জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সমকালকে
জানান, ওই দিন হাসপাতালে রাকিব নামে কেউ চিকিৎসা নিতে আসেননি। রেজিস্ট্রি
খাতা দেখিয়ে তিনি বলেন, রাকিব চিকিৎসা নিলে অবশ্যই রেজিস্ট্রার খাতায় তার
নাম থাকত। 'ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত বলে তার চিকিৎসা করানো হয়নি,
রেজিস্ট্রি খাতায় নাম থাকবে কীভাবে?'- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'এ
ধরনের রোগী এলে অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।'
হাসপাতালের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হলেও রাকিবকে দেশ-বাংলা হাসপাতালে যারা
নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের একজন সম্রাট আকবর সমকালকে বলেন, আহত রক্তাক্ত রাকিবকে
নেওয়ার পরও দেশ-বাংলা চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দেয়। এ কারণেই তার মৃত্যু
ঘটেছে।
সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল :২০ মার্চ দুপুরে ওয়ারীর নারিন্দায়
মারামারির ঘটনায় গুরুতর আহত হন ফজলুর রহমান ওরফে ফজু (৩৫)। তার ভাতিজা
রিজভী হোসেন ও সোহেল তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় পুরান ঢাকার সালাউদ্দিন
স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শরীরে একটি স্যালাইন পুশ
করানোর পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন
কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ব্যাপারে রিজভী সমকালকে বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক
তাদের জানান, এটা সিরিয়াস রোগী, তাকে দেখতে পারবেন না। তখন তারা তাকে ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে নেওয়ার পর
চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন ওই সময় সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের
জরুরি বিভাগে দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক কাওসার আহম্মেদ। তিনি সমকালকে বলেন,
'রোগীর স্বজনের অভিযোগ সত্য নয়। রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার
পালস পাওয়া গেলেও ব্লাডপ্রেশার পাওয়া যাচ্ছিল না। কপাল দিয়ে রক্তক্ষরণ
হচ্ছিল। তাকে একটি স্যালাইন পুশ করা হয়। রোগীর অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে
দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়।'
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল :১৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে উত্তরায়
নির্মাণাধীন এক ভবনের বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে আহত হন শ্রমিক তাহেরুল ইসলাম
নিলু (৫০)। তার ছেলে সোহেল জানান, আহত অবস্থায় তার বাবাকে দুই সহকর্মী
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তাকে কোনো চিকিৎসা না
দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর ঢামেক
হাসপাতালে নেওয়ার সময় মাঝপথেই নীলুর মৃত্যু হয়। তাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার
সারিয়াকান্দি উপজেলার উত্তরপাড়া গ্রামে।
ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ম্যানেজার তোফাজ্জেল হোসেন সমকালকে বলেন, মুমূর্ষু
রোগী যে ঘটনার শিকারই হোন না কেন, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই ঢামেক
হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বারিধারা জেনারেল হাসপাতাল :গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গুলশানের কালাচাঁদপুরের
ক/৯৩ নম্বর বাসায় বিষপান করেন গৃহবধূ মাজেদা বেগম। তার বোন সাহেদা তাকে
নর্দায় বারিধারা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তাকে চিকিৎসা না দিয়েই
ফেরত পাঠানো হয়। সাহেদা সমকালকে জানান, তার বোনের অবস্থা খুব খারাপ ছিল।
হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাদের বলেন, 'এ রোগীর চিকিৎসা এখানে করা হয়
না। কুর্মিটোলায় নিয়ে যান।' অনেক অনুরোধ করলেও চিকিৎসক তার বোনকে দেখেননি।
এরপর মাজেদাকে কুর্মিটোলায় নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাদের
হাসপাতালে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে বিষপানের ক্ষেত্রে
সংকটাপন্ন রোগী ওয়াশ করার ব্যবস্থা নেই।
মিরপুরের গ্যালাক্সি হাসপাতাল :গত ৯ মার্চ ভোরে রক্তাক্ত অবস্থায় মিরপুর
২-এর এক নম্বর সড়কের একটি বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী অপু কুমার ও আনিসুর
রহমানকে একই এলাকার গ্যালাক্সি হাসপাতালে নিয়ে যান বাড়িটির নিরাপত্তারক্ষী
রেজাউল। তাদের শরীর দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরলেও সেখানে তাদের চিকিৎসা না দিয়ে
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
রেজাউল সমকালকে জানান, ৯ মার্চ ভোরে দুর্বৃত্তরা ওই বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী
অপু কুমার ও আনিসুর রহমানকে কুপিয়ে একটি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তিনি
একটি রিকশায় করে তাদের মিরপুর ২ নম্বরের গ্যালাক্সি হাসপাতালে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ঘটনা শুনে হাসপাতাল থেকে বলা হয়, এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা এখানে
হবে না। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। তাদের অনেক অনুরোধ করলেও কাজ
হয়নি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তারা গাড়ি না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা
পুলিশের একটি পিকআপের কাছে যান। সেখানে এসআই মোখলেসুর রহমানকে অনুরোধ করলে
তিনি ওই গাড়িতে করে আহতদেরসহ তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।
রাস্তায় সন্তান প্রসব :২০১৭ সালে রাজধানীতে একের পর এক তিনটি সরকারি
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা পারভীন আখতার। তবে
কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি তার। এক পর্যায়ে আজিমপুরের রাস্তায় সন্তান
প্রসব করেন তিনি। পারভীনকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে তাকে ভর্তি না করে পাঠানো হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানেও তাকে
ভর্তি না করে আজিমপুর ম্যাটারনিটিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পারভীনকে আজিমপুর মাতৃসদনে নেওয়া হলে কোনো কার্ড কিংবা রেজিস্ট্রেশন না
থাকায় কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার
পর প্রসবব্যথায় রাস্তার ওপরই বসে পড়েন পারভীন। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন
তিনি। প্রথমে নড়াচড়া করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নবজাতক মারা যায়।
সোনারগাঁও মোড়ের আলোচিত ঘটনা : ২০১৪ সালে সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী
বাংলামটর থেকে একটি বাসে কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও মোড়ে পুলিশের ট্রাফিক
বক্সের সামনে এসে নামেন। ঠিক তখনই একটি মিনিবাসের ধাক্কায় তিনি রাস্তায়
ছিটকে পড়েন। তিন যুবক তাকে ধরাধরি করে রাজধানীর পান্থপথের বেসরকারি মোহনা
হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গ্রিনরোডের আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে
গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যারা জগ্লুলকে হাসপাতালে
নিয়েছেন তাদের একজন ইমরুল কায়েস জানান, পান্থপথের মোহনা হাসপাতালে রক্তাক্ত
অবস্থায় জগ্লুলকে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ফেলে রাখা হয়। পরে গ্রিনরোডের
আরেকটি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধারকারীরা পরে
জানতে পারেন, তিনি সাংবাদিক ছিলেন।
- বিষয় :
- ঝামেলা এড়াতে 'জিম্মি' জীবন