ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বার্নিকাট

সংলাপ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সৌন্দর্য

সংলাপ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সৌন্দর্য

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট -সমকাল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ | ১৫:১৮ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ | ১৫:২২

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংলাপই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সৌন্দর্য। বিদেশি সহায়তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সংলাপ সবচেয়ে ভালো। 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীতে বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন হবে, যাতে জনমতের সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটবে।

মঙ্গলবার ধানমণ্ডির ইএমকে সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, সমৃদ্ধির পথে এগোতে থাকা দারুণ সম্ভাবনার বাংলাদেশ দেখে যাচ্ছেন তিনি। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিষয়গুলো প্রতিটি দেশেই জটিল, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু অদ্ভুত সারল্য বাংলাদেশের জনগণের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই মানুষগুলোর কথা তার চিরদিন মনে থাকবে এবং তার প্রত্যাশা 'আবার দেখা হবে'। 

একই সঙ্গে তিনি আবারও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক উল্লেখ করে সংশোধনের পক্ষে মত দেন।

২০১৫ সালের শুরুতে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র মিশনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন মার্শা বার্নিকাট। প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন শেষে আগামী শুক্রবারই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে  মঙ্গলবার অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। সকালে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে। এরপর বিকেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি পরে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

'বাংলাদেশে আসার এবং ছেড়ে যাওয়ার সময় আপনার অভিজ্ঞতার পার্থক্য কতটুকু'- এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, অনেক পার্থক্য। যখন বাংলাদেশে এসেছিলাম, তখন দেশটি সম্পর্কে জানা থাকলেও দেখার দৃষ্টিতে এটা ছিল অচেনা দেশ; কিন্তু এখন সেই দেশ ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ এদেশের মানুষ গত তিন বছরে এতটা ভালোবাসা দিয়েছে, আপন করে নিয়েছে, তার তুলনা নেই। আমি যাওয়ার আগে বাংলাদেশকে 'গুডবাই' না বলে বাংলায় বলতে চাই, 'আবার দেখা হবে'। রাজনৈতিক বিষয়ে প্রতিটি দেশেই জটিলতা থাকে, বাংলাদেশেও আছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সারল্য। তাদের ভালোবাসা, মমতা সবকিছুই অকৃত্রিম। 

তিনি বলেন, যাওয়ার সময় সমৃদ্ধির পথে এগোতে থাকা দারুণ সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ দেখে যাচ্ছি।

দুটি বড় রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে সংলাপ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কথা বলার সময় তিনি স্পষ্ট করেই বুঝেছেন, তৃণমূলের কর্মীরা বড় দলগুলোর মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ চায়। বিদেশি সহায়তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানই সবচেয়ে ভালো। সংলাপই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সৌন্দর্য, আর সংঘাত একেবারেই কাম্য নয়।

এ-সংক্রান্ত অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো দল বা জোট নয়, যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অন্তর্নিহিত যোগসূত্র। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি প্রণয়নের আগে প্রায় দু'বছর ধরে সরকার বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। তিনিসহ ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও মতবিনিময় হয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, চূড়ান্ত আইনে তাদের দেওয়া মতামতের প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। এখন যে আইনটি পাস হয়েছে সেটি মত প্রকাশের জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে গণমাধ্যমেও স্বাধীনভাবে তথ্য প্রকাশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, মত প্রকাশ সঠিকভাবে না হলে সরকারের পক্ষেও কোনো বিষয়ে জনগণের মনোভাব সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব হয় না, গণতান্ত্রিক চর্চাও ব্যাহত হয়। এ কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে সেটা সরকারের সঠিক তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহায়ক। তিনি গণতান্ত্রিক চর্চার স্বার্থেই এ আইন নিয়ে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে আরও সংলাপের মাধ্যমে সংশোধনের পক্ষে মত দেন।

রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এ সংকট নিরসনে আর্থিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। 

তিনি বলেন, রাখাইনে কী ঘটেছে, তা এখন বিশ্ববাসী জানে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন এবং জীবিকার নিশ্চয়তা ছাড়া এ সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়, এটাও সবার কাছেই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক কৌশল সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। আগামী দশ বছরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। 

চীনের 'ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড' পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অন্য যে কোনো দেশের পৃথক কোনো পরিকল্পনা থাকতে পারে, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচ্য বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েই এই 'এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয়' উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

কয়েক মাস আগে ঢাকায় তার ওপর হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথার্থ আলাপ হয়েছে। ফলে তিনি যাওয়ার সময় এ বিষয়টি মনে রাখতে চান না। তবে শুধু রাষ্ট্রদূত নয়, কারও ওপর এ ধরনের হামলা কখনই কাম্য নয়।

আরও পড়ুন

×