ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

নৌকায় চড়তে চান শতাধিক ব্যবসায়ী

বর্তমান সংসদে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ৫৯ শতাংশ

নৌকায় চড়তে চান শতাধিক ব্যবসায়ী

আবু হেনা মুহিব ও মিরাজ শামস

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ২১:০১

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যানারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান শতাধিক ব্যবসায়ী। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলের ব্যবসায়ী নেতারাও মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকেও বহু ব্যবসায়ী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। পুরনোদের পাশাপাশি এ বছর নতুন মুখ হিসেবে অন্তত অর্ধশত ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দিয়েছেন। এসব মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এফবিসিসিআইর বর্তমান ও সাবেক নেতা, পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ, ব্যাংকিং ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা রয়েছেন। ক্রমান্বয়ে জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে।

বর্তমান সংসদে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ৫৯ শতাংশ। সংখ্যায় তা ১৭৭। এই সাংসদরা কোনো না কোনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কিংবা চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ রকম সাংসদের সংখ্যা পঞ্চাশের কম নয়। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন এ রকম ব্যবসায়ী নেতার মধ্যে এফবিসিসিআইর বর্তমান ও সাবেক পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান। দোহার-নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে নির্বাচন করতে চান তিনি। সংগঠনের আরেক সাবেক সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলটির অর্থ ও বাণিজ্য সম্পাদকও ছিলেন তিনি। কিন্তু দুই দফা আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই কুমিল্লার একটি আসন থেকে এমপি হন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।

কুমিল্লা-২ আসনে (হোমনা-তিতাস) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মাতলুব আহমাদের সহধর্মিণী এবং নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সেলিমা আহমাদ। তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে যেতে চান; যাতে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারায় নারী উদ্যোক্তাদের অবদান বাড়াতে পারেন।

ফেনী-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এফবিসিসিআইর পরিচালক অভিনেত্রী শমী কায়সার। নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন। জামালপুর-৫ আসন থেকে নৌকায় চড়তে চান বর্তমান পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু। মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন এফবিসিসিআইর পরিচালক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু। টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক পরিচালক আবু নাসের। ময়মনসিংহ সদর আসন থেকে নির্বাচনের প্রত্যাশায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পরিচালক আমিনুল হক শামীম।

গাজীপুর থেকে নির্বাচনের প্রত্যাশায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এফবিসিসিআইর পরিচালক ও গাজীপুর চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সরকার। সংগঠনের পরিচালক খায়রুল হুদা চপল সুনামগঞ্জ-১ আসন ও মাসুদ পারভেজ খান কুমিল্লা-৬ আসনে প্রার্থী হতে চান। চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়াল। একই সমিতির সাবেক সভাপতি দিলীপ রায়ও ফরিদপুর-১ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে চান এফবিসিসিআইর পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান। তিনি ইরান-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি। এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আমদানিকারক মো. আরিফিন মোল্লা।

ব্যাংক-বীমা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও অন্তত অর্ধশত ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদে রয়েছেন মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক ফজলে নূর তাপস (ঢাকা-১০), নূর ই-আলম চৌধুরী লিটন (মাদারীপুর-১), মিডল্যান্ড ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ (ফরিদপুর-৪), মিডল্যান্ড ব্যাংকের আরেক উদ্যোক্তা আব্দুল মজিদ ম ল (সিরাজগঞ্জ-৪), যমুনা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজী (নারায়ণগঞ্জ-১), মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক মো. দিদারুল আলম (চট্টগ্রাম-৪), মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক এমএ মালেক (ঢাকা-২০), প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা (নরসিংদী-৩), মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম (নোয়াখালী-২) এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক বজলুল হক হারুন (বিএইচ হারুন) (ঝালকাঠি-১)।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডা. এইচবিএম ইকবাল (ঢাকা-১২), রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন (ফরিদপুর-১-আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী)। একই আসনে মনোনয়নপত্র কিনেছেন প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক কাজী সিরাজুল ইসলাম। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর পরিচালক একেএম সাহিদ রেজা শিমুল ও তমা কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁঁইয়া (ফেনী-২-সদর) মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন। ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল, টাঙ্গাইল-৬ আসনে (নাগরপুর-দেলদুয়ার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসানুল ইসলাম টিটু, মিডল্যান্ড ব্যাংকের উদ্যোক্তা আবদুল মজিদ মণ্ডলের ছেলে আব্দুল মমিন ম ল সিরাজগঞ্জ-৫, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী ফেনী-৩, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালক এম মোয়াজ্জেম হোসেন বরিশাল-২, সোনালী ব্যাংকের পরিচালক মো. নুরুল আলম তালুকদার টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক আনসার আলী খান কুষ্টিয়া-১, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন হুমায়ুন ফেনী-৩, ন্যাশনাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক একেএম এনামুল হক শামীম শরীয়তপুর-২, শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান লক্ষ্মীপুর-১, মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক আবদুল আলিম খান সেলিম ঢাকা-২০ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

পোশাক খাত থেকে এ বছর ৪৩ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এ খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য মোট ৩৮ জন রয়েছেন বর্তমান সংসদে। এদের মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ৪ জন। আগামী নির্বাচনের মাঠেও রয়েছেন তারা। সাংসদরা হলেন- ঢাকা ৩ থেকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু) হামিদ ফ্যাশনের এমডি; রাজশাহী-৬ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইন্টারস্টপ অ্যাপারেলসের এমডি। চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সানোয়ারা গার্মেন্টসের এমডি। তিনি অবশ্য সাংসদ নন।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বাইরে বিজিএমইএর অনেক সদস্য রয়েছেন বর্তমান সংসদে, যারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার উদ্দেশ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- রংপুর-৪ থেকে আওয়ামী লীগের সাংসদ ও সিপাল গার্মেন্টসের এমডি এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুনশি। ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক অরবিট সোয়েটার্সের পরিচালক। ঢাকা-১৫ আসনে সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার বেস্ট ডেনিম অ্যাপারেলের এমডি। কুমিল্লা-৯ এর সাংসদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফাবিয়ান গ্রুপের এমডি। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী খুলনা-৪ থেকে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন তিনি। সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কুশিয়ারা কম্পোজিট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

পোশাক খাত থেকে নতুন মুখ হিসেবে এবার আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন- বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির তিন সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি (ঢাকা-১৬), মোহাম্মদ নাছির (চট্টগ্রাম-১২), মইনউদ্দীন আহমেদ (চট্টগ্রাম-১০); আতিয়ার রহমান দীপু (গোপালগঞ্জ-১); পোশাক খাতের অপর সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি আসলাম সানি নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) থেকে দলীয় ফরম জমা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

×