ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

রাষ্ট্রপতির সহায়তা চেয়ে চিঠি দেবে ঐক্যফ্রন্ট

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি

রাষ্ট্রপতির সহায়তা চেয়ে চিঠি দেবে ঐক্যফ্রন্ট

ফাইল ছবি

লোটন একরাম

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ২১:০৮ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ২১:১২

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রপতির সহায়তা চেয়ে চিঠি দিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দু-একদিনের মধ্যেই ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে এ চিঠি দিচ্ছেন। চিঠিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় ঐক্যফ্রন্টের অসন্তোষের কথা জানানো হবে। নির্বাচনের বর্তমান পরিবেশ সব দলের জন্য 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে'র উপযোগী নয় বলেও জানাবে জোটটি। সংবিধান অনুযায়ী দেশের অভিভাবক রাষ্ট্রপতিকে এ ব্যাপারে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাবে নির্বাচনী এই জোট। ঐক্যফ্রন্টের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। কমিশন নিজেই আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। নির্বাচনের জন্য 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার এখনও সরকারের উন্নয়নের খবর বারবার প্রচার করছে, তারা কোনো নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না। বিরোধী দলের সংবাদ প্রচার করা হয় না। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও বন্ধ হয়নি। এসব সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী গতকাল সমকালকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ দৃশ্যমান হচ্ছে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হচ্ছে না। সংবিধানে ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। তবে সংবিধানের এ অর্পিত দায়িত্ব পালনে ইসি  নিষ্ফ্ক্রিয় বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করছে ঐক্যফ্রন্ট। পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ভূমিকা নিরপেক্ষ নয় বলে মনে করছেন তারা। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না বলে তাদের চোখে দৃশ্যমান।

সংবিধানের ১১৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীনে হবে। তবে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি দেখে কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে মনে হয় না। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টের চিঠিতে রাষ্ট্রপতিকে বলা হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের সাত দফার কোনো দাবি পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা। প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি বন্ধের আশ্বাস দেওয়ার পরও তা বন্ধ হয়নি। সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে কয়েকশ' মামলা হয়েছে। চলছে গ্রেফতার ও হয়রানি।

ঐক্যফ্রন্ট অভিযোগ করবে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না ইসি। কার্যত ইসির পক্ষ থেকে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। তফসিল ঘোষণার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইসির অধীনে ন্যস্ত হলেও গায়েবি মামলা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। অতীতে তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করলেও বর্তমান ইসি বিরোধী জোটের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেও নীরবতা পালন করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সমকালকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া গ্রহণ করার কথা নয়। অথচ কমিশনকে না জানিয়েই প্রশাসন থেকে সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পোলিং এজেন্টের তালিকা নির্বাচন কমিশন থেকে সংগ্রহ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে কেন্দ্রপ্রধানদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করছে তারা। এবারও সম্ভাব্য পোলিং এজেন্ট ও কেন্দ্রপ্রধান হওয়ার মতো ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করছে পুলিশ। এগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষণ নয় বলে মনে করেন তারা।

আরও পড়ুন

×