ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

সংসদ নির্বাচন

বিএনপির তালিকায় তিন ধারার প্রার্থী

বিএনপির তালিকায় তিন ধারার প্রার্থী

লোটন একরাম

প্রকাশ: ২০ মে ২০১৮ | ২০:৪১ | আপডেট: ২১ মে ২০১৮ | ০৪:৫১

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভেতরে ভেতরে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ক্রমাগত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। সব দাবি-দাওয়া পূরণ না হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবেই দলটি। কারাবন্দি খালেদা জিয়াও নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চেয়ারপারসনের নির্দেশে নির্বাচনে সার্বিক প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারক নেতারা। এরই মধ্যে সারাদেশে তিনশ' আসনে তিন ক্যাটাগরিতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ করছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে আসন ছাড়ার বিষয়টি নিয়েও  আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা।


দলের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির আসনভিত্তিক প্রার্থী তালিকায় প্রথম ক্যাটাগরিতে 'নিশ্চিত' বিজয়ী প্রতিদ্বন্দ্বী; দ্বিতীয়তে 'শক্তিশালী' প্রতিদ্বন্দ্বী ও তৃতীয়তে 'সাধারণ' প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিতদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ১৫১ আসনে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে 'নিশ্চিত' বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীদের। এ তালিকায় সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। দ্বিতীয় তালিকায় মোটামুটি ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হলেও হতে পারেন- এমন প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তৃতীয় তালিকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট ও 'নিশ্চিত' বিজয়ী প্রার্থীদের আসনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাখা হয়েছে। তাদের 'সাধারণ' প্রার্থী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সমকালকে বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সরকারি দলকে সংলাপে বসতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হতে চান না। তবে একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো প্রস্তুতি বিএনপির সব সময়ই রয়েছে। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির একাধিক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা রয়েছেন। যে কোনো সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।


সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থী তালিকা বাছাইকাজ তদারক করছেন। বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে একাধিক জরিপের মাধ্যমে জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি দলীয়ভাবেও বিভিন্ন প্রার্থীর তথ্য-উৎপাত্ত সংগ্রহ করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে ১৫১ আসনে বিএনপি জোটের একক প্রার্থী চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। একই সঙ্গে বাকি ১৪৯টি আসনের প্রতিটিতে তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে।


সূত্র জানায়, বিগত নবম সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ধরেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই নির্বাচনে বিজয়ী এবং অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন- এমন নেতাদেরই 'নিশ্চিত বিজয়ী' প্রার্থী তালিকায় রাখা হচ্ছে। অবশ্য নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী কয়েকজন প্রবীণ নেতার মৃত্যুবরণ ও গুরুতর অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকজন এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ যাবেন। সে ক্ষেত্রে প্রয়াত নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী হিসেবে গুরুত্ব পাবেন।


সূত্র জানায়, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতের আদেশে নির্বাচন করতে পারবেন বলে আশা করছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারলে ফেনী-১ ও বগুড়ার একটি আসনসহ কয়েকটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন তিনি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান সিলেটে এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিলে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিএনপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসন পাবে।


বিএনপির তালিকায় 'নিশ্চিত বিজয়ী' প্রার্থী যারা :অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে দলের যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতারা 'নিশ্চিত' বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রয়েছেন এ সারির অগ্রবর্তী স্থানে।


এ তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তার, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তাহমিনা রুশদীর লুনা, ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, জয়নাল আবেদীন, মনিরুল হক চৌধুরী, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আফরোজা খান রীতা, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, ফজলুল হক আসফিয়া, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, গোলাম আকবর খোন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, আফজাল এইচ খান, আবদুস সালাম প্রমুখ রয়েছেন।


তালিকায় ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে রয়েছেন- এম মোরশেদ খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, ড. ওসমান ফারুক, আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান।


এ ছাড়া তালিকায় আরও রয়েছেন- সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, আসাদুল হাবিব দুলু, এমরান সালেহ প্রিন্স ও শামা ওবায়েদ; বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, পরিবেশ ও বনবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, সহশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সহশ্রমিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সহউপজাতিবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আজগর লবী, সহপরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, নির্বাহী সদস্য রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, আবদুল ওয়াদুল ভূঁইয়া, আবদুল লতিফ জনি প্রমুখ।


এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীকে ১০-১৫টি আসন দেওয়া হতে পারে। জোটের অন্য শরিকদের ১০-১৫টি আসন দেওয়া হতে পারে। আসন বণ্টন নিয়ে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। 

আরও পড়ুন

×