ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

নয়াপল্টনে সহিংসতার ৩ মামলা ডিবিতে, রিমান্ডে ৩৮

নয়াপল্টনে সহিংসতার ৩ মামলা ডিবিতে, রিমান্ডে ৩৮

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ | ১৫:৫৪ | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ | ০৪:৫৭

নয়াপল্টনে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলা বৃহস্পতিবার তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। বুধবারের সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাস, রুহুল কবীর রিজভীসহ ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ৬৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাওয়া হলে ৩৮ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু বক্কর সিদ্দিক ও হেলাল উদ্দিনসহ পাঁচজন বিভিন্ন আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে ঢাকায় আসেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধিতে ব্যান্ড পার্টি, ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি নিয়ে শোডাউন করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে প্রথমে একটি মিছিল ফকিরাপুলের দিক থেকে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে শোডাউন করে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে আসে। এর পর নবী উল্লাহ নবী ও কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে আরও দুটি মিছিল শোডাউন করে একই দিক থেকে আসে। সর্বশেষ মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের একটি মিছিল ব্যান্ড পার্টি, ব্যানার, ফেস্টুনসহ শোডাউন করে বিএনপি কার্যালয়ে আসে। তারা নয়াপল্টনের ভিআইপি রোড বন্ধ করে মিছিল ও শোডাউন করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। রাস্তার এক লেন ছেড়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানালে তারা পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থানরত রুহুল কবির রিজভীকে জানিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করতে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর মধ্যে আনুমানিক দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে নয়াপল্টনের 'হকস বে' নামে গাড়ির শোরুমের উত্তর পাশের রাস্তায় আসামিরা একত্রিত হয়ে বিএনপি কার্যালয় থেকে লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে, পুলিশের কাজে বাধা দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিতে আক্রমণ চালায় ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা রাস্তার পাশে রাখা পুলিশের সরকারি ডাবল কেবিন পিকআপে (ইঞ্জিন নম্বর ২৩১১) আগুন ধরিয়ে দিলে গাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়। আসামিদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস, পল্টন থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আবু সিদ্দিক, এসআই বাবলা বড়ূয়া, মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনারের গাড়িচালক কনস্টেবল অতুল চন্দ্র রায় ও বডিগার্ড কনস্টেবল জিয়াউর রহমান গুরুতর আঘাত পান। তাদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মামলার বাদী পল্টন থানার এসআই সোমেন কুমার বড়ূয়া এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আসামিরা এর পর সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে এগোতে থাকে। এ সময় এজাহারে উল্লেখিত ১৭৭-১৯২ নম্বর পর্যন্ত আসামিদের আটক করা হয়। পরে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো তিন টুকরো পুরনো জর্দার কৌটার অংশ (যা বিস্ফোরিত ককটেলের অংশ) এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িটি জব্দ করে হেফাজতে নেওয়া হয়। এজাহারে বর্ণিত ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিরা দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত অন্য নেতাদের মদদ, নির্দেশ ও অর্থায়নে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল ও দেশে অস্থিতিশীল, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অসৎ ও অভিন্ন উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়ে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসব ঘটনা ঘটায়। এর মাধ্যমে তারা বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। আগুনে পোড়া গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৬০ লাখ টাকা বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

পল্টন থানার এসআই শাহীন বাদশার করা মামলায় বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা স্বীকার করেন, মির্জা আব্বাস উদ্দিন, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, আফরোজা আব্বাস, নবীউল্লাহ নবী, মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান ও কফিল উদ্দিনসহ বিএনপি কার্যালয়ে উপস্থিত অন্য নেতাদের নির্দেশ ও মদদে পলাতক এজাহারনামীয় আসামিরা আরও অনেক নেতাকর্মী নিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল এবং দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। তারা হুকুমের আসামি।

পল্টন থানার এসআই আল-আমিনের করা মামলাটিতে বলা হয়েছে, আসামিরা দুপুর সোয়া ১টার দিকে টপ কালেকশন গলির মুখে সমবেত হয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেয় ও হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। তারা রাস্তার পাশে রাখা পুলিশের সহকারী কমিশনারের (পেট্রোল-মতিঝিল) সরকারি প্রাইভেট কারে (ইঞ্জিন নম্বর ৫৮৪৬) আগুন ধরিয়ে দিলে তা পুড়ে যায়। এটির আনুমানিক মূল্য ৩৫ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

×