ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ট্রাম্প-কিম বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা যেসব কারণে

ট্রাম্প-কিম বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা যেসব কারণে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যকার বৈঠক নিয়ে আঁকা কাটুন— বিবিসি বাংলা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০১৮ | ১৬:৪৭

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরে বৈঠকে বসার কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

তবে এই বৈঠকের ব্যাপারে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, 'এই বৈঠক না হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।'

তিনি আরও বলেছেন, 'সম্মেলনের আগে উত্তর কোরিয়াকে শর্ত পূরণ করতে হবে। যদি সেটা না করে তাহলে এই বৈঠক আরো পরেও হতে পারে।'

হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি এসব মন্তব্য করেন বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, পরমাণু অস্ত্র পরিহার করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি একতরফাভাবে চাপ দিতে থাকে তাহলে তারা নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করবে।

এদিকে, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করার ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবাদিকদের আসতে দিতে রাজি হয়েছে পিয়ংইয়ং। এর আগে তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। আরো কয়েকটি দেশের সাংবাদিকদেরও এজন্যে উত্তর কোরিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে।

বলা হচ্ছে, পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করার উদ্যোগকে দেখা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার শুভেচ্ছাসূচক পদক্ষেপ হিসেবে। কিন্তু এও বলা হচ্ছে যে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই উদ্যোগ পিছিয়েও যেতে পারে।

বৈঠকের ব্যাপারে দু'দেশের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেও দুই নেতা আলোচনার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত বৈঠকের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে এই অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলো কেন?

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এজন্যে চারটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।

তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

আলী রীয়াজ বলেন, 'তিনি যেভাবে একতরফাভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের কথা বলেছেন এবং লিবিয়া মডেলের কথা উল্লেখ করেছেন সেটা উত্তর কোরিয়ার জন্যে একটা বড় রকমের ভীতি তৈরি করেছে।'

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে ২০০৩ সালে লিবিয়া তার গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র পরিহারের কথা ঘোষণা করেছিল। লিবিয়ার ওপর থেকে তখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমাদের সঙ্গে যুদ্ধে কর্নেল গাদ্দাফি নিহত হন।

অধ্যাপক আলী রিয়াজের মতে, দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে যৌথ মহড়া।

তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া অলিম্পিকের কারণে পেছানো হয়েছিল। উত্তর কোরিয়া চাইছিল এই মহড়া বাতিল করা হোক। কিন্তু সেটা বাতিল না করে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।'

তৃতীয় কারণ হিসেবে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন,  চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য লড়াই প্রায় শুরু হতে যাচ্ছে বা হওয়ার মতো পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে সেটাও এর পেছনে পরোক্ষভাবে কাজ করেছে।

তার ভাষায়, 'চীন যেহেতু উত্তর কোরিয়ার বড় সমর্থক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যখন এক ধরনের টানাপড়েন চলছে, এরকম একটা পরিস্থিতিতে চীন সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর একটা চাপ তৈরি করতে চাইছে।

চতুর্থ কারণ হিসেবে আলী রীয়াজ বলছেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে যতোটা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়তো তারচেয়েও বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছেন।

অধ্যাপক রিয়াজের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে দুটো ধারণা এখন স্পষ্ট। একটি হচ্ছে জন বোল্টনের ধারণা। তিনি মনে করেন, এই আলোচনা সফল হবে না, ফলে যুদ্ধের জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

আর অন্যটি হচ্ছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর ধারণা। তিনি একাধিকবার উত্তর কোরিয়াতে গেছেন। অতীতে তিনি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বারবার সামরিক অভিযানের কথা বললেও এখন তিনি চাইছেন অন্তত আলোচনাটা হোক।

আলী রীয়াজ বলেন, 'সম্ভবত হোয়াইট হাউসের কথা বিবেচনা করেই তিনি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে চান। এই পার্থক্যের কারণে বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে এবং এই টানাপড়েনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরি করতে চায় উত্তর কোরিয়া।'

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কিছু শর্তের কথা বলেছেন, যদিও তিনি সেসব প্রকাশ করেননি। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার একতরফাভাবে পরমাণু কর্মসূচি পরিহারের কথা বলছেন। তাহলে কি বাধাটা এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেই আসছে?

এই প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, একটা শীর্ষ বৈঠকের আগে দুপক্ষকে মাঝামাঝি জায়গায় আসতে হবে, যেটা এখনও তৈরি হয়নি।

তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উত্তর কোরিয়া চায় ওই এলাকাতে যাতে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি না থাকে। সেটা আসলে যুক্তরাষ্ট্র মানতে চাইছে না। এছাড়াও ওই এলাকায় অন্যান্য দেশগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র যে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে উত্তর কোরিয়া সেটাও চায় না। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে একতরফাভাবে উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ দিচ্ছে। ফলে শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতিটা এখনও তৈরি হয়নি।'

আরও পড়ুন

×