চার লাখ ডলার ঘুষ নেন ট্রাম্পের আইনজীবী!
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মে ২০১৮ | ০৭:০৯ | আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ | ০৭:৪২
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর একটি বৈঠকের আয়োজন করে দিতে গোপনে চার লাখ ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ওই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সূত্রগুলো এই তথ্য জানিয়েছে। গত বছরের জুনে হোয়াইট হাউজে বৈঠকটি হয়।
ওই লেনদেনের বিস্তারিত জানিয়েছেন ইউক্রেনের একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি বলছেন, বৈঠকে ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের দূতাবাস থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পোরোশেঙ্কোর একটি ছবি তোলা ছাড়া আর বেশি কিছু আশা করা যাচ্ছিল না। কিন্তু পোরোশেঙ্কো আরো বেশি কিছু চাচ্ছিলেন, যাকে একটি পুরাদস্তুর 'বৈঠক' বলে বর্ণনা করা যায়।
তাই এই চিত্রপটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের আগমন। ওই কর্মকর্তার বক্তব্য অনুসারে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একটি পেছন দরজা খোলার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তার একজন সাবেক সহকারীকে দায়িত্ব দেন। ফলে ওই ব্যক্তি একজন বিশ্বস্ত ইউক্রেনিয়ান এমপির সহায়তা চান।
ওই এমপি নিউইয়র্ক স্টেটের একটি ইহুদি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ কাজে লাগান। এর মাধ্যমে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কাছে পৌঁছে যান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি পুরাদস্তুর বৈঠকের আয়োজন করে দিতে কোহেনকে তখন চার লাখ ডলার দেওয়া হয়। তবে এই লেনদেনের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতেন, এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
কিয়েভের দ্বিতীয় আরেকটি সূত্রের দাবি, কোহেনকে ছয় লাখ ডলার দেওয়া হয়েছিল। এসব বক্তব্যের সমর্থনে মাইকেল কোহেনের আর্থিক হিসাবের কিছু তথ্যপ্রমাণ বের করেছেন আরেকজন আইনজীবী মাইকেল অ্যাভেনাত্তি, যিনি পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছেন।
অ্যাভেনাত্তি বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন হিসাবে কোহেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগকে যে হিসাব দিয়েছেন, সেখানে দেখা গেছে ইউক্রেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি খাত থেকে তিনি অর্থ পেয়েছেন। তবে কোহেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে স্থানীয় একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তারা একটি বিবৃতিতে একে 'পুরোপুরি মিথ্যা, মানহানিকর আর সাজানো' বলে বর্ণনা করেছে।
হোয়াইট হাউজের কর্মসূচি তালিকা থেকে দেখা যায়, গত জুনে যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো ওয়াশিংটনে রওনা দেন, তখনো হোয়াইট হাউজের শিডিউলে তার জন্য কয়েক মিনিট সময় বরাদ্ধ ছিল। সে হিসাবে তার করমর্দন আর ছবি তোলার পাশাপাশি হালকা আলোচনার বাইরে কিছু করার সুযোগ ছিল না। তাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো যেদিন ওয়াশিংটনে রওনা হচ্ছেন, সেদিনও এ নিয়ে দেন দরবার চলছিল।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, কিয়েভের কর্মকর্তারা খুবই ক্ষেপে গিয়েছিলেন। কারণ তারা কোহেনের পেছনে হাজার হাজার ডলার ঢালছেন, কিন্তু তার বদলে যথেষ্ট পাচ্ছেন না।
বৈঠকটি পোরোশেঙ্কোর কাছে কে কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় কিছু ব্যাপারে ইউক্রেনের নাম আসায় ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন বলে মনে করেছিলেন পোরোশেঙ্কো।
২০১৬ সালের অগাস্টে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, ট্রাম্পের প্রচারণা ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্ট ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থীদের কাছ থেকে মিলিয়ন ডলার নিয়েছেন। ইউক্রেনে একটি রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চালানোর সময় এই অর্থ নেন তিনি। ওই ঘটনা প্রকাশের পর ম্যানাফোর্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অনেক সূত্রে মতে, পোরোশেঙ্কো ওই তথ্যটি ফাঁস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ তিনি ধারণা করেছিলেন, হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন। ওই সংবাদে আহত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যখন ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই চলছে- এরকম সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শত্রু হতে চায় না তারা।
এ কারণেই ওভাল অফিসে নিজে উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করা ও ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করার দরকার ছিল পোরোশেঙ্কোর। তিনি রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখাতে চেয়েছেন, মার্কিন নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে।
বৈঠক শেষে পোরোশেঙ্কো কিয়েভে ফিরে যাওয়ার পর পল ম্যানাফোর্টের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার ঘোষণা দেয় ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ। কিয়েভের একটি সূত্র জানিয়েছে, পোরোশেঙ্কো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন, যে ট্রাম্প প্রচারণা শিবিরের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার আর কোনো তথ্যপ্রমাণ তারা পাননি। এরই অংশ হিসেবে ম্যানাফোর্টের বিরুদ্ধে তদন্তটি স্থগিত করা হয়। সূত্র: বিবিসি
- বিষয় :
- ডোনাল্ড ট্রাম্প
- মাইকেল কোহেন