ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চা লড়বে ৩০০ আসনেই

সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চা লড়বে ৩০০ আসনেই

অমরেশ রায়

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৮ | ১৯:৪২

৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা জোট। এ লক্ষ্যে জোটবদ্ধ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে ভেতরে ভেতরে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছেন নেতারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে অন্য বাম প্রগতিশীল দলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও জানিয়েছেন জোট নেতারা। অবশ্য নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন কি-না।

বাম গণতান্ত্রিক নেতারা বলছেন, বর্তমানে তারা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। কারণ, বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক এবং কালো টাকা, পেশিশক্তি, প্রশাসন ও সাম্প্রদায়িক প্রভাবযুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর তাদের আস্থা নেই। আদৌ নির্বাচন হবে কি-না, তা নিয়ে এক ধরনের সংশয়-সন্দেহ রয়েছে তাদের। কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, শিগগিরই তারা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হওয়া সাপেক্ষে ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।

বেশ আগে থেকেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সমন্বয়ে গঠিত দ্বিদলীয় মোর্চা 'সিপিবি-বাসদ' এবং অন্য আটটি বামপন্থি দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আলাদাভাবে রাজপথে সক্রিয় ছিল। গত বছরের ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দ্বিদলীয় ধারার বাইরে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার আহ্বানের মধ্য দিয়ে দুই জোটের সমন্বয়ে সিপিবি-বাসদ-গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর জনজীবনের সংকট ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার প্রশ্নে আন্দোলনের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করে এ জোট।

এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জোটভুক্ত দলগুলো আলাদাভাবে দলীয় প্রার্থীর তালিকা তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এ তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কোন আসনে শরিক কোন দলের প্রার্থীর অবস্থান ভালো, কোথায় কাকে ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইত্যাদি বিষয়ও বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হলে আসনগত সমঝোতার জন্য জোটে আলোচনা করা হবে। এরপর মহাজোট ও ২০ দলীয় ঐক্যজোটের বাইরের অন্যান্য বামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানো গেলে তাদের নিয়েও আসনগত সমঝোতা করা হবে বলে জানিয়েছেন জোট নেতারা।

বাম জোটের এই নির্বাচনি সমীকরণে সিপিবি-বাসদ মোর্চা প্রাথমিকভাবে ২০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক আসনে প্রার্থিতার প্রস্তুতি রয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার শরিক দলগুলোর।

এদিকে দলগত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিপিবি কমপক্ষে ১৬০টি আসনে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেশিরভাগ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই চলতি মাসে স্থানীয় শহীদ মিনার থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন তারা। সিপিবির উল্লেখযোগ্য সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান (জামালপুর-২), সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (ঢাকা-১৯), সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম (চট্টগ্রাম-১২), প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন (নরসিংদী-৪), সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স (ঢাকা-৮ অথবা খুলনা-২) এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ (নেত্রকোনা-১) প্রমুখ। সিপিবি-বাসদ জোটের শরিক বাসদ ৭০-৭৫টি আসনে নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান চাঁদপুরে এবং কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ ঢাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাভুক্ত দলগুলোর অনেকেও আলাদাভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এই জোটের অন্যতম শরিক গণসংহতি আন্দোলন ২০-এর বেশি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ১০টির মতো আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে। অন্য ছয় শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), বাসদ (একাংশ), শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনও কমবেশি আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বাম মোর্চার শরিক আটটি দলের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া অন্য কারোরই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। এ অবস্থায় কয়েকটি দল নিবন্ধন প্রাপ্তির প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সমকালকে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন তারা। আগামীদিনে কালো টাকা, সন্ত্রাস ও প্রশাসনিক-সাম্প্রদায়িক প্রভাবমুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থার এ দাবির আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ অমূলক হবে। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন থেকে জামানত বাবদ ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার বিধান চালুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন কি-না, সেটি তারা ভেবে দেখবেন।

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, বাম মোর্চা এবং সিপিবি-বাসদ জোটের যৌথভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মানসিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারা। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা চান তারা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দলগত ও জোটগত- উভয় ভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। প্রাথমিকভাবে দলগুলো প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজও করছে। বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনের প্রসঙ্গ অগ্রসর হলে এসব নিয়েও আলাপ-আলোচনা হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে সৎ ও দেশপ্রেমিক কোনো দল ও প্রার্থীর পক্ষেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ কার্যত অসম্ভব। তাই তারা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন করছেন। পাশাপাশি সম্ভাব্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের।

আরও পড়ুন

×