ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

সাক্ষাৎকার: বোগো সালাযার

শেকড়ের টান উপেক্ষা করা যায় না

শেকড়ের টান উপেক্ষা করা যায় না

সমু সাহা

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ | ২০:৪২ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ০৪:১৮

ইউরোপে যখন রক আর টেকনো নিয়ে মাতামাতি চলছে, ঠিক সেই সময়ে বেছে নিয়েছি শেকড়ের গান। আন্দালুসিয়ানের জিপসিরা যে জ্যাজ পরিবেশন করে, তা আমাদের অভিভূত করেছে। দক্ষিণ স্পেনের ফ্লেমিঙ্গো মিউজিকের প্রতিও দুর্বলতা ছিল। তাই জনপ্রিয়তার স্রোতে গা না ভাসিয়ে স্পেনের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করেছি। লাস মিগাস ব্যান্ডের প্রতিটি সদস্যই একটা সত্যের মুখোমুখি হয়েছে, তাহলো- শেকড়ের টান কখনো উপেক্ষা করা যায় না। এ কারণেই  বিশ্বের নানা প্রান্তে গিয়ে স্পেনের ঐহিহ্যবাহী সঙ্গীত পরিবেশন করি। কথাগুলো বললেন স্পেনের আলোচিত ব্যান্ড লাস মিগাসের কণ্ঠশিল্পী বোগো সালাযার।

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত 'ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট ২০১৮'-এ অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিল স্পেনের এই ব্যান্ড। উৎসবে অংশ নেওয়ার আগে ঢাকার একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপে অংশ নেন ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী বোগা সালাযার। তিনি বলেন, লোকগান শুধু দর্শক-শ্রোতাকে আনন্দই দেয় না, একই সঙ্গে একেকটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে। এ কারণে আমরা স্বদেশি সঙ্গীতের প্রসারে কাজ করছি। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

সমকাল :ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্টে অংশ নিতে প্রথম এ দেশে এসেছেন, কেমন লাগছে?

বোগো সালাযার :আমার মতো লাস মিগাসের প্রতিটি সদস্যই উচ্ছ্বসিত এটা ভেবে যে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় লোকসঙ্গীত উৎসবে অংশ নিয়েছি। এখানকার দর্শক-শ্রোতা স্প্যানিশ ভাষা কতটা জানে বা বোঝে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত হইনি। কারণ আমরা জানি, সঙ্গীতের কোনো নির্দিষ্ট ভাষা নেই। এ শুধুই অনুভবের। যে জন্য পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষ আরেক প্রান্তের গান শুনে আনন্দ পায়। শুনেছি, বাংলাদেশের মানুষ অসম্ভব সঙ্গীতপাগল; তাই গানে গানে দর্শক-শ্রোতাকে আনন্দ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ সফরটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সমকাল :ঐতিহ্যবাহী গানের বিভিন্ন ধারা আছে। লাস মিগাস কোন ধারার গান পরিবেশন করতে পছন্দ করে?

বোগো সালাযার :আমাদের গানে স্পেনের ফ্লেমিঙ্গো মিউজিকের বেশ প্রভাব আছে। এটি দক্ষিণ স্পেনের একটি ঐতিহ্যবাহী গানের ফর্ম। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের লোকগানের ছায়া খুঁজে পাওয়া যাবে। যেমন আন্দালুসিয়ানের জিপসি জ্যাজের ছায়াও আমাদের গানে স্পষ্ট। এর প্রধান কারণ, জনপ্রিয়তার স্রোতে গা না ভাসিয়ে স্পেনের ঐহিহ্যবাহী সঙ্গীত দর্শক-শ্রোতার সামনে তুলে ধরতে চাওয়া। যে গান শেকড়কে চেনায়, সে গানই আমরা করতে চেয়েছি। এ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের শো করার সুযোগ হয়েছে। তাই বিভিন্ন দেশের লোকজ গানের ধারা আমাদের গানগুলোয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নিজেদের গান পরিবেশনের একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করেছি।

সমকাল :লাস মিগাস ব্যান্ড সম্পর্কে জানতে চাই।

বোগো সালাযার :স্পেনের বার্সেলোনায় ২০০৪ সালে আমাদের ব্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরের শিল্পভ্রমণে আমাদের দলে নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছে। লাস মিগাস মূলত একটি স্প্যানিশ শব্দ। মিগাস শব্দটি এসেছে মূলত স্পেনের একটি বিখ্যাত খাদ্যদ্রব্য থেকে। আগেই বলেছি, আমরা নির্দিষ্ট কোনো ঘরানায় সীমাবদ্ধ থাকতে চাইনি। তবে আমরা যে ঘরানার গান পরিবেশন করি তা স্পেনে মেডিটেরিয়ান গান কিংবা আত্মার গান নামে পরিচিত। মূলত নিজস্ব ছন্দের অনুপ্রেরণা থেকেই লাস মিগাসের এগিয়ে চলা। এখন পর্যন্ত আমাদের তিনটি অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। প্রথম দুটি রেকর্ডিং অ্যালবাম 'রেইনাস দেল মাতিউত', 'নসোত্রাস সোমোস'-এর মাধ্যমে মূলত আমাদের ব্যান্ড জনপ্রিয়তা পায়। এ ছাড়াও সর্বশেষ গত বছর অ্যালবাম 'ভেন্তে কনমিগো' ফ্লেমিঙ্গো মিউজিক হিসেবে ১৮তম লাতিন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছিল। এখন পর্যন্ত আমরা স্পেনসহ বিশ্বের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ফোকফেস্টে অংশ নিয়েছি। এ ব্যান্ড গঠনের আগেও স্পেনে আমাদের প্রত্যেকের মিউজিকে আলাদা ক্যারিয়ার ছিল। কিন্তু পছন্দের যোগসূত্রতা একবিন্দুতে মিলে যাওয়ায় লাস মিগাস গঠন করি।

সমকাল :এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তো শো করেছেন। স্পেনের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের লোকজ গানের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন কি?

বোগো সালাযার :গত বছর মরক্কোতে একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখেছি- আরবের গানের সঙ্গে স্প্যানিশ লোকগানের দারুণ মিল। কীভাবে সুরের এই মেলবন্ধন ঘটেছে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজে ফিরছি। আরব দেশগুলোর সঙ্গীতের সঙ্গে স্পেনের সঙ্গীতের মেলবন্ধনের বিষয়টি লাস মিগাসের প্রতিটি সদস্যকে আলোড়িত করেছিল। এ কারণে ওখান থেকে এসেই আরবীয় সুর নিয়ে নিরীক্ষা শুরু করি। এখনও চেষ্টা করছি আমাদের গানে আরবীয় সুর প্রয়োগ করার।

সমকাল : কীভাবে লোকগান এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব?

বোগো সালাযার :এটি অনেক জটিল প্রশ্ন। এই আধুনিক যুগে এসে ফোক গান কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এর উত্তর সত্যি আমার অজানা। এটা ঠিক, লোকজ গান ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক লোকজ উৎসবের আয়োজন করা হয়। কিন্তু শুধু এসব লোকজ সঙ্গীত উৎসবের দ্বারা এর প্রসার সম্ভব নয়। লোকসঙ্গীতের চর্চা বাড়ানোর মধ্য দিয়েই এর প্রসার ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।

আরও পড়ুন

×