ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ম্যাচজয়ী ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মুশফিক

ম্যাচজয়ী ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মুশফিক

ছবি: ইয়াহু ক্রিকেট

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৬:৪৩ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১২:২৫

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস মুশফিককে মনে রাখবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বাংলাদেশের উত্থানের গল্পের রচয়িতাদের একজন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তিনি নিজেকে খুব যত্ন করে প্রস্তুত করাও তার বিশেষত্ব। অবাক হলেও সত্যি শেষ পাঁচ বছরে বিদেশের মাটিতে টেস্টে তার রানের গড় পঞ্চাশের কোটায়। বাংলাদেশের অনেক জয়ের সাক্ষী তিনি। নিজের ব্যাটিংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে মুশফিক ইএসপিএনকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো: 

প্রশ্ন: শেষ পাঁচ বছরে বিদেশের মাটিতে ৫০ গড়ে কিভাবে রান তুলেছেন? 

মুশফিক: কেউ দেশের মাটিতে কিংবা দেশের বাইরে বেশি রান করতে চায় ব্যাপারটা এমন বলে আমার মনে হয় না। প্রত্যেক সিরিজে আমি আমার সামর্থ্যের সেরাটা দিতে চাই। তবে এটা সত্য যে দেশের বাইরে রান করাকে আমি আলাদা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা শুধু দেশের মাটিতে ভালো খেলে এমন অনেকে কথা ওঠে। সেজন্য আমি আমার খেলায় উন্নতি করতে চাই। এটা কঠিন কন্ডিশনে শক্ত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রান তোলার একটা ক্ষুধা। 

তামিম, সাকিব, রিয়াদ এবং আমি নিজেদের মধ্যে কথা বলি। আমাদের ম্যাচে লিড নেওয়া উচিত সেই আলাপ হয়। আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভালো করতে পারেনি। তবে আবার সুযোগ পেলে ভালো করতে চাই। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলংকায় আমার সামর্থ্যের সেরাটা দিতে পারিনি আমি। 

প্রশ্ন: কিংস্টন, ওয়েলিংটন এবং হায়দরাবাদে ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন। এর মধ্যে কোনটা আপনার প্রিয়? 

মুশফিক: ওয়েলিংটনেরটা আলাদা। আমি প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পর ইনজুরির কারণে একাদশে ছিলাম না। নিউজিল্যান্ডে আমার বা দলের রেকর্ড ভালো ছিল না। তামিম এবং মাহমুদুল্লাহ নতুন বলের ধকলটা সামলেছিল। আর সেজন্য আমি ভালো ইনিংস খেলতে পেরেছিলাম। হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে রান করাও স্বপ্নের মতো ব্যাপার। 

প্রশ্ন: ওয়ানডে ক্রিকেট ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালটা আপনার জন্য বিশেষ ছিল। শুরুর সাতটা বছর সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। রান করা এবং স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর এই কাজটা কিভাবে করলেন?

মুশফিক: এখনকার সময়ে ভালো উইকেটে ৩০০ রানও নিরাপদ না। ম্যাচের ১১ থেকে ৪০তম ওভার পর্যন্ত স্পিন এবং পেস বোলিংয়ে মিড অন এবং মিড অফে শট খেলার সুযোগ থাকে। অফ স্পিন এবং লেগ স্পিনেও বাউন্ডারি মারার সুযোগ পাওয়া যায়। ভালো স্ট্রাইক রেটে রান তুললে বোলাররা চাপে থাকে। এক্ষেত্রে আমি অবশ্য আমাদের আগের কোচ চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহেকে কিছু কৃতিত্ব দেবো। আমাকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্ট্রাইকরেট বাড়িয়ে খেলার কথা বলেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপেই আমি এটা প্রয়োগ করতে পেরেছিলাম। 

প্রশ্ন: চলতি বছরের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্রুত ৩০ রানের এক ইনিংস খেলেন আপনি। ওই ইনিংসই ম্যাচের চিত্র বদলে দেয়। শ্রীলংকার মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের ম্যাচেও শেষ দিকে আপনি দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন। দুই ম্যাচের পরিস্থিতি দু'রকম ছিল। এভাবে চাপের মুখে ব্যাটিং বদলানোর কাজটা কিভাবে সামলান? 

মুশফিক: স্টোক ক্রিকেটার হিসেবে আপনাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে বদলাতে হবে। ওটা মানসিক সামর্থ্যেরও ব্যাপার। স্পিনে আপনি শট খেললেন কিংবা ডাউন দ্য উইকেটে আসলেন। যেটাই করেন নিজের মধ্যে বোঝাপড়াটা থাকতে হবে। এটা অবশ্য অনুশীলনেরও ব্যাপার। ব্যাটিং এবং মানসিক দক্ষতা দিয়ে ওই পরিস্থিতি সামলাতে হয়। ফিটনেসও এক্ষেত্রে সাহায্যে করে। 

প্রশ্ন: কোনটি বেশি কঠিন। ক্রিজে গিয়েই ধুমধাম মারা। নাকি পরিস্থিতি বিচার করে বড় শট খেলা? 

মুশফিক: বাংলাদেশের ক্রিকেট বিবেচনায় দুটোই কঠিন। আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ প্রতিদিন আসে না। ভারতের ক্রিকেটাররা এমন পরিস্থিতির দশটির মধ্যে নয়টিতে জয় পায়। আমরা ওমন পরিস্থিতি পায় ছয় মাস-এক বছরে একবার। এমন পরিস্থিতি যত বেশি সামাল দেবেন তত আত্মবিশ্বাসী হবেন। 

প্রশ্ন: গেল বছর আপনার অধিনায়কত্বের খারাপ এবং ভালো মুহূর্ত কি? 

মুশফিক: গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর অধিনায়ক এবং খেলোয়াড় হিসেবে আমার জন্য খুব বাজে ছিল। দল হিসেবে ভালো করিনি আমরা। আমাদের আরও ভালো করা উচিত ছিল। তবে আমরা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট হারিয়েছি। শ্রীলংকাকে তাদের মাঠে টেস্ট হারিয়েছি। নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছি। এগুলো আমাকে গর্বিত করে, তৃপ্তি দেয়। 

প্রশ্ন: সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহ এবং মাশরাফির সঙ্গে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে খেলছেন। অনুভূতি কেমন? 

মুশফিক: শেষ চার-পাঁচ বছর এই চার ক্রিকেটারের সঙ্গে নিয়মিত খেলছি। সাকিব, তামিম এবং রিয়াদ ভাইয়ের মতো ব্যাটসম্যানের সঙ্গে খেললে সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যায়। আমাদের এক সঙ্গে ম্যাচ জয়ী জুটি আছে। আমরা পাঁচ জন গত চার-পাঁচ বছর কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং বিশ্ব পরিসরে পারফর্ম করেছি। মাশরাফি ভাইতো অতুলনীয়।  

প্রশ্ন: তামিম বিশ্বের সেরা ১০ ক্রিকেটারের একজন হতে চান। পারফর্ম করতে সেটাই তাকে উৎসাহ দেয়। আপনাকে উৎসাহ দেয় কি? 

মুশফিক: আমারও তেমন আছে। আমি কেবল আগের সিরিজ থেকে সামনের সিরিজে আরও ভালো করতে চাই। আমার ছেলেবেলার স্বপ্নই হলো বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ জেতা। আমি এখনও সেটাকে তাড়া করছি। আমি অনেক ম্যাচে হেরেছি কিন্তু ভালো স্মৃতিও আছে আমার। আরও অনেক সুখ স্মৃতি চাই আমি। দশ ম্যাচের নয়টায় জিততে চাই। 

প্রশ্ন: ২০১৯ বিশ্বকাপে ভালো করা কতটা গুরত্বপূর্ণ? 

মুশফিক: বড় টুর্নামেন্টে ভালো করতে দলীয় ছন্দ লাগে। এটা এলাম, দেখলাম, জয় করলাম; এমন কোন ব্যাপার না। আমরা যদি এশিয়া কাপে ভালো করতে পারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো খেলি। তবে দল হিসেবে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বিশ্বকাপের আগে যদি পুরো দলের পারফর্মের ওই ধারাটা থাকে তবে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ আমাদের জন্য দারুণ এক স্মৃতিময় টুর্নামেন্ট হতে পারে। 

আরও পড়ুন

×