পর্নো ব্যবসার নতুন জাল
পুলিশের মাসব্যাপী অনুসন্ধানে পুরো চক্র শনাক্ত গ্রেফতার ৭
সাহাদাত হোসেন পরশ
মাসখানেক আগে দুই বিদেশি নাগরিকের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ডলারের বিনিময়ে তারা ১৮ বছরের নিচে কিশোরীদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন। তারা চাইলে অনলাইনে ১৫ ডলার দিয়ে নিবন্ধন করে তাদের গ্রুপের সদস্য হতে পারেন। এরপর কিশোরীদের সান্নিধ্যের বিনিময়ে প্রতি ঘণ্টায় তাদের ১০০-১৫০ ডলার ব্যয় করতে হবে। কাজের সূত্র ধরে বাংলাদেশে আসার পর অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের ব্যাপারে পর্নো ব্যবসার এমন সূত্র পাওয়ার পর ওই দুই বিদেশি বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে যে লিঙ্ক থেকে তারা প্রস্তাব পেয়েছেন তার কয়েকটি তাকে দেখান। এরই মধ্যে বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের এসকর্ট সার্ভিস নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এর পরই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ বিভাগ। তদন্তের জন্য সমন্বিত একটি টিম গঠন করে পুলিশের সদস্যরাই পরিচয় গোপন করে অনলাইনে পর্নো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরই যা বেরিয়ে আসে, তা কল্পনাকে হার মানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন শতাধিক পেজ তৈরি করে পর্নো ব্যবসার অভিনব সব জাল ফেলেছে একটি চক্র। ছদ্মনামে ফেসবুকে তিন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া মেধাবী ছাত্রসহ ছয় তরুণ পর্নো ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে চালানো চারটি পর্নো-সংক্রান্ত পেজে গড়ে এক লাখ করে অনুসারী রয়েছে। অন্তত তিন হাজার তরুণী তাদের এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছে। চার বছর ধরে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহরে অনলাইনে কাস্টমার সংগ্রহ করে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছে তারা। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে পর্নো ব্যবসায় জড়িত এত বড় সংঘবদ্ধ চক্রের খোঁজ পাওয়া দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বলে জানায় পুলিশ।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর গত শনিবার রাজধানীর নিকেতনের একটি পাঁচতলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসকর্ট সার্ভিসের নামে উঠতি বয়সী কিশোরীদের ব্যবহার করে পর্নো ব্যবসায় জড়িত করানোর অভিযোগে ছয় তরুণ ও এক নারীকে গ্রেফতার করেছে সাইবার প্রতিরোধ বিভাগ। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে স্কুল-কলেজপড়ূয়া দুই কিশোরীসহ ৯ নারীকে। এ ছাড়া একই বাসা থেকে ১১ পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাইবার প্রতিরোধ বিভাগের ডিসি আলিমুজ্জামান সমকালকে বলেন, দেশে পর্নো ব্যবসার নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে এসকর্ট সার্ভিস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পর্নোগ্রাফিতে জড়ানো হচ্ছে। প্রথমবারের মতো অনলাইনে পর্নো ব্যবসায় জড়িত এত বড় সংঘবদ্ধ চক্রকে আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
পুলিশ বলছে, যুব সমাজের অবক্ষয় রোধে ২০১৬ সালে দেশে সাড়ে পাঁচশ' পর্নো সাইট বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, পর্নো সাইট বন্ধের পর অভিনব উপায়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র।
পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানান, অন্তত চার বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেজ খুলে সেখান থেকে টার্গেট করা ব্যক্তিদের কাছে মেয়ে সরবরাহের প্রস্তাব পাঠানো হয়। বিশেষ করে ছদ্মনামে ছয়টি গ্রুপ থেকে পর্নো ব্যবসার জাল ফেলা হয়। সেগুলোর নাম হলো- শিশির আহমেদ, রিকন খান, অপূর্ব চৌধুরী, পাশা ভাই, অমি চৌধুরী অপু ও এলেক্স প্রধান। বিদেশিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা ক্রেতা সেজে এসব গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তারা জানতে পারেন- ছদ্মনামের শিশির আহমেদ পর্নো গ্রুপটি চালাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোস্তফা মোশাররফ, এলেক্স প্রধান নামে গ্রুপটি চালাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবির ছাত্র রেজওয়া-উল-হায়দার, অপূর্ব চৌধুরী নামে গ্রুপটি পরিচালনা করছেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র আসিফ হাসান তুষার, অমি চৌধুরীর নেপথ্যে আছেন খুলনার ম্যানগ্রোভ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র সৈয়দ বিপ্লব হাসান, রিকন খান নামে গ্রুপটি চালিয়ে আসছেন মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করা ছাত্র মাহমুদ ও পাশা ভাইয়ের নেপথ্যে রয়েছেন আরেক তরুণ কাজী কাদের নেওয়াজ। এ ধরনের কাজে ছয় তরুণকে সহায়তা করত মাহমুদের স্ত্রীও। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের গ্রুপে বিভিন্ন কিশোরী ও তরুণীর ছবি বিকৃত করে তা পর্নোর বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছয় তরুণ পর্নো ব্যবসার জন্য একটি ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম বিভিন্ন বাসায় সরবরাহ করার বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে দেওয়া হয়। উঠতি মডেল থেকে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা ছয় তরুণের আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে জানায় পুলিশ।
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ছয় তরুণ জানান, অনলাইনে পর্নো ব্যবসায় তাদের সহায়তা করছেন একজন 'বড় ভাই'। তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। প্রায়ই ওই বড় ভাই দেশের বাইরে যান। তখন তার ব্যবসা পুরোটাই তারা দেখভাল করেন। এর বিনিময়ে জনপ্রতি পাঁচশ' টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পান তারা। দেনদরবারের পর যে কোনো পর্নো ব্যবসায় বাসায় নারী-পুরুষ পাঠানোর সার্ভিস তারা দিয়ে থাকে বলে অনলাইনের বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ পার্টিতে এ চক্রের সদস্যরা র্যাফেল ড্র'র আয়োজন করে থাকে। সেখানে জিতলে 'ভিআইপি মডেলের' সান্নিধ্য পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সেক্স টয়েজ নামে নানা বিনোদনের সামগ্রীর ব্যবসা করছেন তারা। এ ধরনের সামগ্রীর কোনটির কত দাম, তা তাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত দেওয়া থাকে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার নিকেতনের পাঁচতলা একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা ৯ মেয়ের মধ্যে দু'জনের বয়স ১৬ বছরের নিচে। তাদের মধ্যে একজন রাজধানীর শনির আখড়ার একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। আরেকজন এইচএসসি পড়ূৃয়া। কীভাবে ওই আস্তানায় গেল জানতে চাইলে নবম শ্রেণি পড়ূয়া কিশোরী জানায়- কয়েক মাস আগে ফেসবুকে এক তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে ফেসবুকে প্রায় কথা হতো। ওই বান্ধবী শনিবার তার জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নেওয়ার কথা বলে নিকেতনের একটি বাসার ঠিকানা সরবরাহ করেন। উবার ডেকে কীভাবে সেখানে যেতে হবে, তা জানান তিনি। এরপর নিকেতনে যাওয়ার পর তাকে একটি কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন কক্ষে আরও অনেক মেয়েকে দেখে সে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
কীভাবে এ ধরনের কাজে জড়ালেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোস্তফা মোশারফ জানান, বিভিন্ন পর্নো সাইট ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ এ ধরনের একটি লিঙ্কের তথ্য পান তিনি। সেখানে যোগাযোগ করলে বলা হয়, নারী-পুরুষ যে কোনো গ্রাহক সংগ্রহ করে দিতে পারলে তাকে কমিশন দেওয়া হবে। এর পর থেকেই তিনি ওই কাজে সম্পৃক্ত হন। নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েক মাস পরই পর্নোসাইট ও লিঙ্কের ঠিকানা পরিবর্তন করেন তারা। কাজের প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে সিলেট থেকে ঢাকায় আসতেন তিনি।
অভিযানে নেতৃত্বে দেওয়া পুলিশের সাইবার প্রতিরোধ বিভাগের সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, অনলাইন পর্নো ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেফতারে সাইবার জগতে গোয়েন্দা জাল বিছানোর পর থেকে এসব চক্রের সদস্যরা কাকে কখন কীভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছিল, তা সার্বক্ষণিক তদারকি করা শুরু হয়। শনিবার যখন পুরো চক্রের সদস্যরা নিকেতনের বাসায় জড়ো হয়, তখনই অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়। ফাঁদে পড়ে যে দুই কিশোরী নিকেতনে গিয়েছিল, তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়। আর যারা জেনেশুনে ওই আস্তানায় গিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের শুরুতে এই চক্রের ব্যাপারে বিবিসি বাংলা সার্ভিসের পক্ষ থেকেও তথ্য পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল।
ইশতিয়াক আহমেদ আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জব্দ মোবাইল সেট ও কম্পিউটারে অন্তত তিন হাজার মেয়ের ছবিসহ বায়োডাটা পাওয়া গেছে। সেখানে অনেকের মোবাইল ফোন নম্বরও রয়েছে।
- ‘শিগগিরই বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত হবে ওয়ালটন’
- শেখ হাসিনা যতদিন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ততদিন: হানিফ
- ফাহিম মাসরুরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
- দিল্লির অধিনায়কত্ব ছাড়লেন গম্ভীর
- যে মন্দিরে ৪০০ বছর পর প্রবেশ করল পুরুষ
- ৩ দিনের সফরে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
- চট্টগ্রামে যাদু দেখানোর নামে প্রতারণা, গ্রেফতার ৯
- ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সময় নির্ধারণ
- সাঁথিয়ায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা
- কানে প্রদর্শিত হবে পোড়ামন ২
- দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন আবদুল হামিদ
- টানা ছুটির ফাঁদে দেশ
- এমপির গাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর ঢিল, তারপর…
- হায়দরাবাদের বিপক্ষে ‘হায়দরাবাদী মুস্তাফিজ’
- আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে দুই ডজন চিকিৎসক
- রোমাকে হারিয়ে ফাইনালে এক পা লিভারপুলের
- এলএনজি নিয়ে নতুন স্বপ্ন শিল্প খাতে
- খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন ৫ আত্মীয়
- মুস্তাফিজদের বাড়ি এসে সাকিবদের জয়
- পরকীয়ার জেরে সন্তান হত্যা: প্রধান আসামি মোমেন রিমান্ডে
- এলএনজি নিয়ে নতুন স্বপ্ন শিল্প খাতে
- বেদনার অশ্রুতে ঝরেছে না পাওয়ার ক্ষোভ
- নির্বাচনী বাজেটে কর নয়, থাকবে ছাড়
- নারায়ণগঞ্জে মহাশ্মশানের জলাধার দখল
- নিরুদ্দেশ হাওয়ায় কবি
- বান্দরবানে আতঙ্ক
- আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে দুই ডজন চিকিৎসক
- ব্যাংক-ব্যবসায়ী নিলাম নিলাম খেলা
- চোর নয়, ওরা খুনি
- পাল্টাচ্ছে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ প্রক্রিয়া