ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ভোটের হাওয়া: বাগেরহাট-১

নৌকার দুর্ভেদ্য ঘাঁটি

নৌকার দুর্ভেদ্য ঘাঁটি

দেলোয়ার হোসেন, বাগেরহাট ও পঙ্কজ মণ্ডল, চিতলমারী

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০১৮ | ২১:১৫

বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-১ সংসদীয় আসন। মধুমতী নদী জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং বাগেরহাটের চিতলমারী-মোল্লাহাট উপজেলাকে পৃথক করলেও যুগ যুগ ধরে গোপালগঞ্জের সাংস্কৃৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব জেলার এ তিন উপজেলায় বহমান। স্বাধীনতার আগে-পরে অধিকাংশ জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনেই এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এ কারণে আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।


পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ খায়ের নির্বাচিত হন। সে সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ-ভাসানীর প্রার্থী শেখ মুজিবর রহমান। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস এম লায়েকুজ্জামান বিএনপি প্রার্থী সৈয়দ মোজাহিদুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের এম এ খায়ের দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান, যিনি আগের মেয়াদে ওই আসনে বিএনপিদলীয় এমপি ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মোজাম্মেল হোসেন বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ মুজিবর রহমান।


১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিনা ভোটে বিএনপি প্রার্থী শেখ মুজিবর রহমান কয়েক মাসের জন্য এমপি নির্বাচিত হন। পরে একই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ  নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। সে সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি প্রার্থী শেখ মুজিবর রহমান। পরে শেখ হাসিনা এ আসন ছেড়ে দিলে তার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দীন উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। সে সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি প্রার্থী শেখ মুজিবর রহমান। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন। পরে শেখ হাসিনা এ আসন ছেড়ে দিলে শেখ হেলাল উদ্দীন উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হেলাল উদ্দীন এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।


স্থানীয় এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোটে মূল বিভাজন এনে দেয় চিতলমারী উপজেলার সংখ্যালঘু ভোট। তাই স্থানীয়রা চিতলমারী উপজেলাকে বলে থাকেন 'আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক'। এ আসনে বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় এ দুই দলের ভোটের ব্যবধান তেমন বেশি নয়। ফলে বরাবরই জয়ের নিয়ামক হয়ে ওঠেন চিতলমারীর ভোটাররা। আর এখানকার সিংহভাগ ভোটই যায় আওয়ামী লীগের বাক্সে। তাই বিরোধীদের এবারের বিশেষ মনোযোগ চিতলমারী উপজেলার ভোটারদের দিকে। এ ছাড়া বাগেরহাট-১ আসনে এমপি হিসেবে শেখ হেলাল উদ্দীন দলে ও দলের বাইরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার মেয়াদকালে এলাকার অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে ভোটারদের এ আস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 


এদিকে, এলাকার সার্বিক উন্নয়নে বৃহত্তর স্বার্থে শুধু বাগেরহাট-১ আসনই নয়, বাগেরহাট জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শেখ হেলাল উদ্দীন এখন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এ আসন থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে শেখ হেলাল উদ্দীন এবারও এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন- এটা অনেকটা নিশ্চিত। 


অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বলে খ্যাত বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী কে হচ্ছেন- তা নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শেখ মুজিবর রহমান, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, সহসভাপতি মাসুদ রানা, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রবিউল আলম ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপন। এ ছাড়া এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ওলামা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এস এম আল জুবায়েদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মনোনয়নপ্রত্যাশী- ইসলামী শাসনতন্ত্রের ফকিরহাট উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাস্টার ইদ্রিস আলী মির্জা ও মুজাহিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. লিয়াকাত আলী। 


বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শেখ মুজিবর রহমান বলেন, এ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। এবারও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে নির্বাচনে আগ্রহী। 


বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান দিপু বলেন, বিগত দিনের চেয়ে বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপি এখন শক্ত অবস্থায় আছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি থেকে তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। জেতার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।


বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল আলম বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে যোগ্য মনে করলে তিনি এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। অন্যথায় দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে কাজ করবেন।


বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাসুদ রানা বলেন, দল যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন।


জেলা বিএনপি নেতা ও সাবেক জাসাস নেতা মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপন বলেন, এ আসন থেকে বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশ নেবেন। 


জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মাওলানা এস এম আল জুবায়েদ বলেন, জাতীয় পার্টি এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নিলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

আরও পড়ুন

×