ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো হলো গ্রাম!

জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো হলো গ্রাম!

জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রামে ঘুরানো হয়েছে ইন্তাজকে -সমকাল

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮ | ১৪:১৯ | আপডেট: ২২ মে ২০১৮ | ১৪:২৩

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নে ইন্তাজ আলী (৩৫) নামে ব্যক্তিকে বিচারের নামে তার তিন মেয়ে ও গ্রামবাসীর সামনে  নাকে খত দেওয়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, জোড় করে থুথু খাওয়ানোর পর  গলায় জুতার মালা পরিয়ে দফাদারকে দিয়ে সারা গ্রামে ঘুরানো হয়েছে তাকে।

নির্যাতিত ইন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ রাণীগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে। 

ঘটনাটি গত রোববার সকালে ঘটলেও ভয়ে ও লজ্জায় সেটি গোপক করে রাখেন ইন্তাজ। পরে প্রতিবেশিদের পরামর্শে মঙ্গলবার দুপুরে নালিতাবাড়ীর প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

ইন্তাজ অভিযোগ করেন, পূর্ব শত্রুতার জেড়ে বাঘবেড় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক ও ইউপি মেম্বার সেলিম বিচারের নামে তাকে এভাবে হেনস্থা করেছেন।

ইন্তাজ আলী বলেন, গত রোববার সকালে এনামুল হক ও মেম্বার মো. সেলিম বাড়িতে চৌকিদার পাঠিয়ে আমাকে স্থানীয় আলীর বাজারে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো কথা না শুনে, আমি আমার মাকে মেরেছি এমন অভিযোগ এনে আমাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে রোজা থাকা স্বত্বেও আমাকে জোড় করে নাকে খত দেওয়ানো এবং থুথু খাওয়ানো হয়। পরে দফাদার দিয়ে জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রামে ঘুরায়।

তিনি বলেন, এ সময় আমার স্কুল পড়ুয়া তিন মেয়ে অনেক কান্নাকাটি করেও তাদের থামাতে পারেনি।  

সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে ইন্তাজ আলী বলেন, লজ্জায়, অপমানে আমি এখন কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। অপমানের যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি না। মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দিই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গ্রামবাসী জানান,যারা বিচার করেছে তারা প্রভাবশালী। গ্রামে ওদের দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। 

এ ব্যাপারে  অভিযুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুলের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে অপর অভিযুক্ত মেম্বার সেলিম সাংবাদিকদের জানান, ইন্তাজের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামের সবাইকে নিয়ে বিচার করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।  

ইন্তাজের মা রাহেলা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমি ছেলের বিরুদ্ধে এমন শাস্তির জন্য অভিযোগ করি নাই। আসলে বড় নাতির সঙ্গে আমার একটু ঝগড়া হয়েছিল। আমি রাগের মাথায় ওই ঘটনার বিচার চেয়েছিলাম। 

স্থানীয়রা জানান, ইন্তাজের ছোট ভাইয়ের জমি কম দামে কিনতে বাধা দেওয়া এবং নাবালক মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানানোর জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটনো হয়েছে। 

এ ব্যাপারে বাঘবেড় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর বলেন,  ঘটনাটি  আমি শুনেছি। এটা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। 

নালিতাবাড়ী থানার ওসি তদন্ত সারোয়ার আলম জানান, এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×