ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে ইয়াবা গডফাদাররা

বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে ইয়াবা গডফাদাররা

ওপরে (বাঁ থেকে) টেকনাফের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শাহাজাহান মিয়া, সৈয়দ হোসেন এবং (নিচে) মোহাম্মদ কাদের ও মঞ্জুর আলমের বিলাসবহুল বাড়ি- সমকাল

সারোয়ার সুমন, টেকনাফ (কক্সবাজার) থেকে ফিরে

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮ | ২০:৪৪

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার উত্তর জালিয়াপাড়া গ্রামে 'রাজপ্রাসাদে'র মতো বাড়ি বানিয়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল বশর। এখন এই বাড়িতে থাকেন না তিনি। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বন্দুকযুদ্ধে এমপি বদির বেয়াই আকতার কামাল নিহতের পর অন্যত্র রাত কাটাচ্ছেন বশর। হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা স্টেশনের পাশে নূরুল হুদার সুরম্য অট্টালিকাও এখন নীরব। স্ত্রী কামরুন নাহার দিনের বেলায় মাঝেমধ্যে এলেও বেশিরভাগ সময় তালা ঝুলে এ প্রাসাদে। টেকনাফের মৌলভীপাড়া গ্রামে ঢুকতে দৃষ্টি কাড়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী আলী হোসেনের কোটি টাকায় বানানো অট্টালিকা। কিন্তু সেই বাড়িতেও এখন সুনসান নীরবতা। বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আলী হোসেনের ভাই মঞ্জুর আলমও তার বাড়ি ছেড়ে রাত কাটাচ্ছেন অন্যত্র।

শুধু নুরুল বশর, আলী হোসেন ও মঞ্জুর আলমরা নন; টেকনাফ ঘুরে জানা গেল, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে এখন ঘরছাড়া তালিকাভুক্ত ইয়াবার গডফাদাররা এবার মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালান্সের তথ্যও সংগ্রহ করতে শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই সুরম্য অট্টালিকার মালিকরাই আতঙ্কে আছেন সবচেয়ে বেশি। ঘুরতে ঘুরতে দেখা গেল, মাদকের টাকায় টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, নীলা, ডেইলপাড়া, নেঙ্গরবিল, কুলালপাড়া ও লেদা এলাকায় গড়ে উঠেছে এমন সুরম্য শতাধিক ভবন। এসব বাড়ি নিয়ে এখন বিপদে আছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। অভিযান এড়াতে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে এখন অন্যত্র বসবাস করছেন তারা। মাদকের টাকায় বানানো এসব সুরম্য ভবন পাহারা দিতে কেউ কেউ রেখে গেছেন গরিব কোনো নিকটাত্মীয়কে।


টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিজিবি চেকপোস্ট। এর পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন পাঁচতলার আবাসিক কটেজ দেখা গেল। তবে এখন কাজ বন্ধ। কারণ, বাড়ির মালিক নূর মোহাম্মদ র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। আবাসিক এই কটেজ পেরিয়ে আলিখালী রাস্তার মাথায় গেলে দেখা যায় গোলাপি ও টিয়া রঙের দৃষ্টিনন্দন এক দ্বিতল বাড়ি। একাধিক নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি ডজনখানেক সিসিটিভি ক্যামেরাও আছে এ ভবনের চারপাশে। কিন্তু সুরম্য এ প্রাসাদেও এখন থাকে না কোনো 'ইয়াবা রাজা'। এমপি বদির বেয়াই আকতার কামাল বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় প্রাসাদ ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বাড়ির মালিক নূরুল কবির।


এমপি বদির ভাই তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বাড়ি বানিয়েছেন পৌরসভার জালিয়াপাড়ায়। কিন্তু সাধের এ বাড়িতে এখন থাকতে পারছেন না তিনি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিশেষ অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছেড়েছেন তিনি। টেকনাফের কুলালপাড়ায় দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল বাড়ি করেছেন তালিকাভুক্ত আরেক মাদক ব্যবসায়ী নুরুল আবছার নুরশাদ। একইভাবে লেদা এলাকায় নুরুল হুদা, চকবাজার এলাকায় সৈয়দ হোসেন, নেঙ্গরবিলে শাহজাহান মিয়া, কুলালপাড়ায় মো. কাদের, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ায় জোবাইর হোসেন করেছেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। সেখানে গিয়ে জানা গেল, বাড়ি ছেড়ে এখন গোপন স্থানে রাত কাটাচ্ছেন তারা। 


তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় এমপি বদির সৎভাই মোহাম্মদ শফিক, মোহাম্মদ ফয়সাল, আবদুস শুক্কুর ও ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেলও এখন এলাকাছাড়া। অথচ জালিয়াপাড়া ও আলিয়াবাদে অট্টালিকা আছে তাদেরও। জালিয়াপাড়ায় গিয়ে জানা গেল, এসব বাড়িতে এখন থাকছেন না তাদের কেউই। মাদকের টাকায় মৌলভীপাড়ায় আবদুর রহমান ও তার ছোট ভাই একরাম গড়েছেন সুরম্য অট্টালিকা। কিন্তু তাদেরও খোঁজ মিলল না বাড়িতে। আবদুল আমিন, মোহাম্মদ আমিন ও নুরুল আমিনরা তিন ভাই। মাদক পাচার করে ডেইলপাড়ায় তিন ভাই তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। তারা কেউই এখন বাড়িতে থাকেন না।


এ প্রসঙ্গে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, মাদকের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবাই আমাদের নজরে আছে। মাদক পাচার করে কে কোথায় কী সম্পদ গড়েছে, সে তথ্যও আছে। বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে থাকলেও শেষ রক্ষা হবে না।


মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, মাদক ব্যবসা করে অনেকে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। কৌশল পাল্টে এখন অন্যত্র অবস্থান করলেও তারা ছাড় পাবেন না।

আরও পড়ুন

×