চট্টগ্রাম
রক্ষা পাক জাম্বুরি পার্ক
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৯:৩৭
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সাড়ে আট একর জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে নগরবাসীর
স্বপ্নের পার্ক। যেখানে এলাকাজুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কৃত্রিম লেক, ফোয়ারা,
মাল্টিপারপাস ছাউনি, বসার বেঞ্চ, গ্যালারি, বিশ্রামাগারসহ আরও অনেক কিছু।
পার্ককে আলাদা রূপ দিতে চারপাশে লাগানো হয়েছে ঔষধিসহ হরেক প্রজাতির গাছ।
রয়েছে মাঠজুড়ে সাড়ে পাঁচ শতাধিক এলইডি লাইট। প্রাকৃতিকভাবে একটি বিনোদন
কেন্দ্রে যেমন পরিবেশ থাকা প্রয়োজন তার সবটুকুই রয়েছে আগ্রাবাদের জাম্বুরি
পার্কে। কিন্তু নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থার অভাবে দৃষ্টিনন্দন এই
পার্কটি নির্মাণে ব্যয় করা সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন
সংশ্নিষ্টরা। উদ্বোধনের মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে লেকের পানি হারিয়েছে
শ্রী। গোসল করা হচ্ছে সেখানে। ফেলা হচ্ছে চিপস, বাদামের খোসাসহ অনেক কিছু।
পার্কে হাঁটার জন্য ও বসে আড্ডা দেওয়ার আলাদা জায়গা থাকলেও লাগানো ঘাস ও
গাছের ওপরই হাঁটছেন দর্শনার্থীরা। ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে গাছের পাতা ও ফুলও।
পার্কে ঘুরে দেখা গেছে, লেকের পানিতে গোসল করছে বিভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়ে।
অনেকে পানি দিয়ে পরিস্কার করছেন পা ও জুতা। কেউ কেউ সন্তানের মুখ-হাত-পা
ধুয়ে দিচ্ছেন। প্রায় ৮ হাজার ফুট জায়গাজুড়ে হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করা
হয়েছে পার্কটিতে। বসে আড্ডা দেওয়ার সুবিধার্থে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে বড়
দুটি গ্যালারিও। এতকিছুর পরও অনেককে দেখা গেছে মাটিতে লাগানো ঘাস ও চারার
ওপর হাঁটতে।
তবে চট্টগ্রামে সাড়া ফেলা এই পার্কটি রক্ষা করতে নড়েচড়ে বসেছেন
সংশ্নিষ্টরা। এজন্য নেওয়া হয়েছে পাঁচ সিদ্ধান্তও। সিদ্ধান্তগুলো হলো- এক.
তদারকির জন্য তিন শিফটে চারজন করে ১২ জনকে দায়িত্ব দেওয়া। দুই. পার্ক
প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টায় খুলে ১০টায় বন্ধ এবং বিকেল ৩টায় খুলে রাত ৮টায় বন্ধ
করা। তিন. বাদাম, চিপসসহ নানা খাবারের প্যাকেট যাতে ফেলা না হয় তার জন্য
পানির ফোয়ারার চারপাশে বেষ্টনী দেওয়া। চার. আপাতত জরিমানা না করে পার্কে যে
ময়লা ফেলবে তাকে সিসি টিভি ক্যামেরায় শনাক্ত করে পুনরায় তাকে দিয়ে ময়লা
তোলার ব্যবস্থা করা। পাঁচ. পার্কে আসা দর্শনার্থীদের উদ্দেশে প্রতিদিন
আধঘণ্টা পর পর মাইকে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া।
হালিশহর বড় পোল এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রহমান নাছির সমকালকে
বলেন, 'জাম্বুরি পার্কে অনেককে লেকে গোসল করতে, গাছের পাতা ছিঁড়তে ও ঘাসের
ওপরে হেঁটে যেতে দেখছি। মানুষকে সচেতন ও সাবধান করতে এখানে ব্যবস্থা রাখা
উচিত।' বেসরকারি কর্মকর্তা মো. আহসান সুমন বলেন, 'পার্কটি রক্ষা করতে
নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব বিষয় তদারকি করতে আলাদা লোককে
দায়িত্ব দিতে হবে।'
এদিকে, নানা মাধ্যমে জাম্বুরি পার্কের অপরিস্কারসহ নানা বিষয় জানার পর
শুক্রবার তাৎক্ষণিক পরিদর্শনে আসেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন। একঘণ্টা পার্কে অবস্থান করে তিনি বলেন, 'পার্কে হাঁটুন আর
নিঃশ্বাস নিন। পার্কে বসে কেউ বাদাম খাবেন না। গাছের পাতা ছিঁড়বেন না।'
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ নূর বলেন, উদ্বোধনের
কয়েকদিনের মাথায় পার্কের অপরিচ্ছন্নতাসহ নানা বিষয় আমাদের নজরে এসেছে।
মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধন হতে না হতেই ময়লা-আবর্জনায় নান্দনিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে চলা
জাম্বুরি পার্ক রক্ষা করতে এবং পার্ক ব্যবহারকারীদের সচেতন করতে লিও ক্লাব
অব চিটাগাং ইম্পেরিয়াল সিটিসহ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন সচেতনতামূলক
কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দৃষ্টিনন্দন
জাম্বুরি পার্ক উদ্বোধন করা হয়। ৮ দশমিক ৫৫ একর জমির ওপর গৃহায়ন ও গণপূর্ত
মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পার্কটি বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। জাম্বুরি
মাঠটি একসময় প্রজনন ক্ষেত্র ছিল। নালার কালাপানিতে চাষাবাদ হতো সবজি।
সন্ধ্যায় পরিণত হতো ছিনতাইকারী আর মাদকাসক্তদের স্বর্গরাজ্যে। তবে নতুনভাবে
নির্মিত পার্কের কারণে পুরো এলাকাটি পেয়েছে নতুন রূপ। এতে স্বস্তি ফিরে
এসেছে এই জনপদে।
- বিষয় :
- জাম্বুরি পার্ক