ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত

'জোর করে কাউকে পাঠানো হবে না'

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত

মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা— ছবি সংগৃহীত

কক্সবাজার অফিস ও টেকনাফ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ | ১৫:৪৩ | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ | ০৭:০৭

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে রাজি না থাকায় বৃহস্পতিবার বহুল প্রত্যাশিত এই প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি। কবে ফের প্রত্যাবাসন শুরু হবে, তা নিশ্চিত নয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কাজে নিয়োজিত সরকারের অতিরিক্ত সচিব শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বিকেলে কক্সবাজারের ট্রানজিট ক্যাম্পে সাংবাদিকদের বলেন, 'রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করানো যায়নি। তারা এ মুহূর্তে রাখাইনে ফিরে যেতে চায় না। সেখানে তারা নিরাপদ মনে করছে না। তারা দাবি জানিয়েছে—বাড়িঘরে ফেরার নিশ্চয়তা না পেলে এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত না হলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবে না।'

সাংবাদিকদের তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের অনেক বোঝানো হয়েছে, তবু তারা স্বদেশে ফিরতে রাজি নয়। ফলে প্রত্যাবাসন স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হবে।

কখন ফের প্রত্যাবাসন শুরু হবে— জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, 'প্রত্যাবাসন শুরু করতে আমরা প্রস্তুত। রোহিঙ্গারা সম্মত হলে যে কোনো সময়ে তা শুরু করা যাবে।'

এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ সরকার স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না।'

জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশের কর্মকর্তারাই প্রস্তুত ছিলেন। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়ে বৃহস্পতিবার ৩০ পরিবারের ১৫০ রোহিঙ্গার স্বদেশে ফেরার কথা ছিল। সীমান্তের এপারে ঘুমধুম অস্থায়ী ক্যাম্পে কর্মকর্তারা প্রস্তুত ছিলেন। টেকনাফের উনচিপ্রাং এবং উখিয়ার জামতলী ক্যাম্প থেকে ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গারা এলেই তাদেরকে সরাসরি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সীমান্তের জিরো লাইনে। সেখানেই মিয়ানমার কর্মকর্তাদের কাছে তাদের হস্তান্তর করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার জন্য সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কর্মকর্তারাও ছিলেন প্রস্তুত। তাদের সঙ্গে ছিল প্রয়োজনীয় যানবাহন। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও রোহিঙ্গাদের নেওয়া যায়নি ট্রানজিট পয়েন্টে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে বৃহস্পতিবার দিনভর প্রচেষ্টা চলে। প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দুপুর ১টার দিকে টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পে উপস্থিত হন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তারা। প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের ছাড়পত্র পাওয়া ১৭টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। তাদেরকে স্বদেশে ফেরার অনুরোধ জানানো হয়। তাদেরকে বোঝানো হয়— মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে। তাদেরকে বাড়িঘরে ফেরার ব্যবস্থা করা হবে। এর পরও রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে রাজি হয়নি।

এ সময় ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। খাইরুল আমিন নামে এক রোহিঙ্গা নেতা হ্যান্ড মাইক নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। রোহিঙ্গারা দাবি জানায়, মিয়ানমারে তাদের নাগরিক অধিকার দিতে হবে। তাদেরকে নিজ বাড়িভিটায় পুনর্বাসন করতে হবে। মিয়ানমার সরকারের দেওয়া ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড নেবে না বলেও তারা দাবি জানায়।

ক্যাম্পে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, দুপুরে হঠাৎ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রোহিঙ্গারা। মিছিল-সমাবেশে প্রকম্পিত করে তোলে পুরো ক্যাম্প এলাকা। ৫ দফা দাবিতে অনড় থেকে তারা জানায়— দাবি পূরণ হলেই দেশে ফিরে যাবে। তারা আরও বলে, 'তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস করে না।'

মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যও জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান বিক্ষোভকারীরা। প্রত্যাবাসন শুরু উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উখিয়া, টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এই পরিকল্পনার ঘোর বিরোধিতা করতে থাকে। বৃহস্পতিবারও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিবৃতিতে প্রত্যাবাসন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুন

×