ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে

 প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা

ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে

ফাইল ছবি

আবু তাহের, কক্সবাজার

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৮ | ২০:৪৪ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ০৫:০৭

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। তবে রোহিঙ্গারা বলছে, রাখাইনে তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও ভিটেমাটি পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় তাদের জোর করে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এই আতঙ্কে প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারাও। তারা মনে করছেন, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরতে না চাইলে নির্ধারিত সময়ে প্রত্যাবাসন শুরু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে দেওয়া হয়। যাচাই-বাছাই শেষে তারা সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ছাড়পত্র দেয়। ছাড়পত্র পাওয়া এসব রোহিঙ্গাকে নিয়েই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। তবে এ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হচ্ছে কি-না, তার ওপর নজর রাখছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি কি-না, তা যাচাইয়ে গতকাল সোমবার থেকে কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল তাদের। তা হয়নি।

সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে পরিস্থিতি এখনও অনুকূল নয়। জোর করে ফেরত পাঠানো হতে পারে- এ আতঙ্কে অনেক রোহিঙ্গা এরই মধ্যে ক্যাম্প ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। তারা নিজের ইচ্ছায় ফিরতে না চাইলে তাদের জোরপূর্বক সেখানে পাঠানো সম্ভব নয়। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

এদিকে, সরেজমিন উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং, টেকনাফের চাকমারকুল, উনচিপ্রাংসহ কয়েকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেশে পাঠানো হতে পারে- এই ভয়ে টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদ ও নুরুল আমিনের পরিবার ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে। উনচিপ্রাং ক্যাম্পের মমতাজ বেগমের পরিবারও পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করেছে। কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহিম ও বালুখালী ক্যাম্পের মাস্টার আব্দুর রহিম প্রত্যাবাসন শুরুর আগে মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছেন।

এদিকে, ক্যাম্পগুলোর মধ্যে এমন কিছু গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যারা  ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা জানান, কেউ রাখাইনে ফিরতে রাজি হলে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অনেক পরিবার দেশে চলে যেতে চায়। কিন্তু ওইসব গ্রুপের ভয়ে তারা কথা বলতে পারছে না। কেউ কেউ ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপন করছে।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের অনেকেই এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসনে সম্মত নয় বলে স্বীকার করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম। তিনি জানান, এখনও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। সব সমস্যা মোকাবেলা করে শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে তার আশা।

তিনি বলেন, টেকনাফের কেরুনতলী ও উখিয়ার বালুখালী এই দুটি ট্রানজিট ঘাট দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা রয়েছে। তবে যোগাযোগ সহজ হওয়ার কারণে আপাতত বালুখালী ঘাট দিয়ে প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি চলছে।

সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিতীয় দফায় আরও ২২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে এখনও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রথম দফায় সাড়ে আট হাজারের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গার ছাড়পত্রের বিষয়েও কিছু জানায়নি দেশটি। ছাড়পত্র না পেলেও তালিকাভুক্ত হওয়ায় এসব রোহিঙ্গার অনেকের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় আসে।

জাতিগত নিধন অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার পর পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার নিবন্ধন হয়েছে। এরপর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই নিবন্ধন কার্যক্রমে এ পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ কার্যক্রমের সুবিধার জন্য ফের হাতে নেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক নিবন্ধন।

আরও পড়ুন

×