চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য এই তিন মাস হাওরাঞ্চলে ধান ঘরে তোলার মৌসুম। এ বছরও যথাসময়ে শুরু হয়েছে ধান কাটা। তবে কৃষক সান্তাজ মিয়াদের ক্ষেতে পাকা ধান নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে বলে জানা গেছে।

একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় সান্তাজ মিয়া গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু তিনি নন তাঁর মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া গ্রামের আরও অর্ধশতাধিক পরিবারের একই অবস্থা।

সান্তাজ মিয়া বলেন, গেল বছর উজানের ঢল আর শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয় সব ধানি জমি। এবার গ্রামের কাইজ্জার কারণে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তার  দুশ্চিন্তা, সামনের দিনগুলো বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে খাবে কি?

খাগালিয়া গ্রামের লোকজেনর অভিযোগ, তাদের ৩০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৪০টি গরু, শতাধিক হাঁস, পাকা ধান, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষ। সময়মতো কাটতে না পারায় ৬০টি পরিবারের ৪০০ বিঘা জমির পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে জমিতে।

তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভলাকুট ইউপি চেয়ারম্যান মো. রুবেল মিয়া ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় লুট হওয়া ২২টি গরু প্রকৃত মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গরু ফেরত পেলেও পাকা ধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় আসামি পক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। তাদের দাবি, পুলিশের গ্রেপ্তার ও প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে জমিতে নামতে পারছে না তারা। ধান ঘরে তুলতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।

গতকাল সরেজমিন খাগালিয়া গ্রামে দেখা গেছে, আশপাশের পাকা ধান কাটা হয়ে গেলেও আসামিদের প্রায় ৪০০ বিঘা জমির ধান এখনও কাটা হয়নি। ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে পড়ছে ধান।

স্থানীয় হামেদা বেগম দাবি করেন, সকালে ধানক্ষেতে গেলে কয়েকজন মিলে তাঁকে কাচি দিয়ে আঘাত করে। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে নাসিরনগর হাসপাতালে নিয়ে আসে।

তাহমিনা আক্তার অভিযোগ করেন, তাঁদের তিন পরিবারের ১২০ বিঘা পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে। জমিতে শ্রমিক পাঠালে তাদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পানিও খাইতাম পারতাছি না। ঘরে টিউবওয়েলও উঠাই নিয়া গেছে।’

ঈদের দিন বিকেলে খাগালিয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রব মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদের পক্ষের লোকজন খাগালিয়া নতুন বাজার এলাকায় সরকারি খাস জায়গায় ধান মাড়াইয়ের ‘খলা’ স্থাপন নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে জামাল মিয়া নামে এক কৃষক নিহত হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের  সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ধান কাটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় কৃষকের পাকা ধান কাটার অনিশ্চয়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আজ (শনিবার) ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হবে।