ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

ইমরানের তুরুপের তাস ‘ডিজিটাল গেরিলা’

ইমরানের তুরুপের তাস ‘ডিজিটাল গেরিলা’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ইমরান খানের ভাষণটি দেখছেন এক ব্যক্তি। ছবি- রয়টার্স

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৬:৩৩ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৬:৫০

জেলে থাকার কারণে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজে সে দেশের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বটে, কিন্তু তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। প্রতিকূল অবস্থা থেকে উঠে এসে এমন জয়ের পেছনে অনেক বড় একটি অবদান রেখেছে দলটির প্রযুক্তিনির্ভর ‘গেরিলা প্রচারণা।’

২০২৩ সালের ৯ মে মাসে ইমরান খানকে প্রথমবার গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টার পর পরই পাকিস্তানজুড়ে পিটিআই নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে ইমরান খান গ্রেপ্তার হন, দলটির অনেক শক্তিশালী নেতারা আত্মগোপনে চলে যান, সাধারণ নেতাকর্মীরা ধরপাকড়ের শিকার হন। এমন হতশ্রী অবস্থা থেকে ফিরে আসার নেপথ্যে রয়েছেন দলটির সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান, জিবরান ইলিয়াস।

ইলিয়াসের প্রথম তুরুপের তাসটি ছিল ইমরান খানের ‘ভার্চুয়াল জনসভা’। জেলে বন্দি ইমরান খানের লেখা বক্তৃতা, পুরোনো বক্তৃতার ফুটেজ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে তৈরি করা হয় নতুন একটি ভাষণ। মাসের পর মাস ইমরান খানের চেহারা না দেখার পর এই ভাষণটিতে প্রথম তাকে কথা বলতে দেখা যায়, এতে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন পিটিআই সমর্থকরা। বারবার ইন্টারনেটের সমস্যা হয় ভাষণটি প্রচারের সময়ে, তবুও এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৭ ডিসেম্বর প্রচার করা এই ভাষণটি ছিল পিটিআই এর প্রথম ভার্চুয়াল জনসভা।

এই সাফল্যের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় জোরেশোরে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে দেয় পিটিআই।

পেশোয়ারের একটি আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর জাগরা। তার প্রচারণার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার পর এ নিয়ে একটি ভিডিও করে তা পিটিআইয়ের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হয়। এতে বিপুল সাড়া পড়ে যায় ভোটারদের মাঝে। ভিডিওটি প্রচারের পর জাগরার ছোট একটি জনসভা করার কথা ছিল, যেখানে বড়জোর ১০০ মানুষ জড়ো হওয়ার কথা। কিন্তু ওই ভিডিওর জনপ্রিয়তার জেরে কয়েক হাজার মানুষ চলে আসে জনসভায়।

‘একেবারে গেরিলা জলসা দেখা গেল’, জাগরা এ বিষয়ে বলেন। ‘এ থেকেই বোঝা যায় আমাদের সমর্থন কতোখানি আর আমাদের প্রচারণার যোগ দিতেও ভোটাররা কতো উৎসাহী।’

এক পর্যায়ে এই দলের প্রচারণার প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ বাতিল করে দেওয়া হয়, অর্থাৎ তা ব্যবহার করে কেউ নির্বাচনে দাড়াঁতে পারবে না। তাহলে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কী প্রতীক ব্যবহার করবেন আর ভোটাররা তা জানবেনই কী করে? পাকিস্তানে সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশেরও কম, তাই ভোটে জিততে হলে প্রতীক বা মার্কার পরিচিতি থাকা খুবই জরুরি।

এই সমস্যা সমাধানেও ইলিয়াস অভিনব এক পন্থা বের করেন। একটি অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়। সেখানে আসনের নাম লিখলেই চলে আসে ওই আসনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীর নাম ও তার নির্বাচনী প্রতীক। 

রাষ্ট্রীয় ধরপাকড় ও বিভিন্ন রকমের হয়রানির মাঝে এসব প্রার্থীদের প্রচারণা ব্যহত হতে থাকে। তাদের সাঁটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়, জনসভায় জড়ো হতে বাধা দেওয়া হয়, বাড়ি বাড়ি হয়ে গণসংযোগেও বিঘ্ন ঘটানো হয়। ফলে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ‘ভার্চুয়াল’ প্রচারণার দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়েন।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পিটিআই নেতা জানান, তার প্রচারণার পেছনে বড় একটি শক্তি ছিল হোয়াটসঅ্যাপ। সেখানে চ্যানেল খুলে ঝটপট তথ্য সরবরাহ এবং আলোচনা সভা আয়োজন করা সহজ হয়েছিল তার জন্য।

আল-জাজিরাকে ইলিয়াস জানান, পাকিস্তানের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল খোলা হয়। এসব চ্যানেল থেকে ভোটের বিষয়ে তথ্য নিতে পারেন ভোটাররা। এছাড়া ইমরান খানের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি চ্যাটবট ব্যবহার করা হয়। এই প্রোফাইলে কেউ ভোট সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে চ্যাটবটটি উত্তরে জানিয়ে দেয় কোথায় গিয়ে ভোট দিতে হবে। ভোট দিতেও এই চ্যাটবট উদবুদ্ধ করে। চ্যাটবটটি এতই প্রাণবন্ত যে, ভোটারদের মনে হয় তারা ইমরান খানের সাথেই চ্যাট করছেন।

পিটিআইয়ের এতসব প্রচেষ্টা কাজে এসেছে। নির্বাচনে দেখা গেছে তাদের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়জয়কার। তবে তারা সরকার গঠন করতে পারছেন না এখনো। এ অবস্থায় জোট সরকার গঠনে একে অপরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে নির্বাচনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। শেষ পর্যন্ত যদি তারা জোট সরকার গঠন করে, তাহলে সেটি ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। এখন শুধু সময়ই বলতে পারে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×