- অন্যান্য
- ৬৩০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চায় ইসি
৬৩০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চায় ইসি
এক লাখ ১০ হাজার নষ্ট ইভিএম সংস্কার করার পরিকল্পনা

আগামী সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম সংস্কার করতে হবে। ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর অর্ধেক, অর্থাৎ ৬৩০ কোটি টাকা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট থেকে বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে চেয়ে ২১ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। বাকি অর্থসহ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাবদ ব্যয়ের জন্য আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা চেয়েছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জন্য নতুন ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। তবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই প্রকল্পে সম্মতি মেলেনি সরকারের। ফলে প্রকল্পটি স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় ইসি। এ বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের ১৬তম সভায় ২০১৮ সালে কেনা ইভিএমের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। গত নির্বাচনের আগে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনা হয়। এর মধ্যে ৪০ হাজার মেশিন পুরোপুরি অকেজো। এগুলো আর মেরামত করা সম্ভব হবে না। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চেয়েছে বিএমটিএফ। এসব মেশিন মেরামত সম্ভব হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন সম্ভব হবে বলে ধারণা করছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২০১৮ সালে দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনার পর ২০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংসদীয় উপনির্বাচন, স্থানীয় সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ মোট ১ হাজার ১৫৫টি নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইভিএম সংস্কারে চলতি বাজেট থেকে বিশেষ বরাদ্দ দরকার বলে মনে করছে সংস্থাটি।
নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম সমকালকে বলেন, কমিশনের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট হওয়ায় অর্থ প্রদানে অর্থ বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে আশা করছে কমিশন।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের অন্য খাতের বরাদ্দ কমিয়ে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে ৬৩০ কোটি টাকা জোগান দেওয়া কঠিন। এ ছাড়া বাজেটের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়, সেখান থেকে অর্থ দেওয়া যায়। সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়। ইভিএম মেরামতে সে অর্থ ব্যয় করা যাবে কিনা, তাও দেখা হচ্ছে। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আগামী অর্থবছরের বাজেট-সংক্রান্ত বৈঠকে নির্বাচনী ব্যয় ও ইভিএম সংস্কারে খরচের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানায় ইসি। কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, অর্থ বিভাগ টাকা সংস্থান করলে ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। যদি টাকা না পাওয়া যায়, তাহলে অন্য সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ইভিএমে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা, তা নির্ভর করছে অর্থপ্রাপ্তির ওপর।
মন্তব্য করুন