- অন্যান্য
- ভূমি নিয়ে হয়রানি অব্যাহত দূর হয়নি ভোগান্তি
ভূমি নিয়ে হয়রানি অব্যাহত দূর হয়নি ভোগান্তি

ফাইল ছবি
দেশের গোটা ভূমি খাতকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় এনে ভোগান্তি দূর করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করা হলেও মানুষের হয়রানি, ভোগান্তি দূর হয়নি। বিশেষ করে জরিপে অব্যবস্থাপনার কারণে ভূমি নিয়ে মানুষের বিরোধ, দ্বন্দ্ব, সংঘাত চলছেই। জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা-মোকদ্দমা করেও মালিকানার সংকট দূর হচ্ছে না।
কারসাজি করে জমির ‘শ্রেণি’পরিবর্তন করা হচ্ছে। উন্নত জমিকে নিম্ন শ্রেণি উল্লেখ করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। প্রভাব খাটিয়ে জাল-জালিয়াতি করে খাসজমি, জলমহাল বেদখল করা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করলেও ভূমির মালিকানাসহ নানা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য রয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি খাতের সাতটি নতুন কার্যক্রম উদ্বোধন করে গতকাল বুধবার তিন দিনের জাতীয় ভূমি সম্মেলন শুরু করেছে। এই সাতটি কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ভূমির সংকট নিরসনে এখন পর্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়নি। মাঠপর্যায়ে ভূমির দীর্ঘদিনের সংকট নিরসনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দক্ষ জনবল বৃদ্ধি, ডিজিটাইজেশনের কার্যক্রম জোরদার করা ও পরিকল্পিতভাবে অর্থবহ জরিপ সম্পন্ন করতে বিশেষজ্ঞরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম শুধু গ্রহণ করলে হবে না। সাধারণ মানুষ এই কার্যক্রমের সঙ্গে সহজেই কতটুকু সম্পৃক্ত হতে পারছে– সেটা দেখার বিষয়।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ভূমি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি কার্যক্রম। এগুলোর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ– এ ক্ষেত্রে দলিল নিবন্ধনের পরই ই-নামজারির ব্যবস্থা রয়েছে। সব জমির নকশা অনলাইনে চালু করা হয়েছে স্মার্ট ভূমি নকশা পদ্ধতি। খতিয়ানের ধারাবাহিক ইতিহাস সংরক্ষণে স্মার্ট ভূমি রেকর্ডস পদ্ধতি চালু ও ভূমির সব তথ্য অনলাইনভিত্তিক করতে স্মার্ট ভূমি পিডিয়া প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া উন্নত ভূমিসেবা একটি ঠিকানায় আনতে স্মার্ট ভূমিসেবা কেন্দ্র চালু, কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সারাদেশের জরাজীর্ণ ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোকে রূপান্তরিত করা হয়েছে পাকা ভবনে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স।
ভূমির মাঠ প্রশাসনে নানা উদ্যোগ : ভূমিসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে ভূমিসেবা যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমির সব কাজকে গতিশীল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চালু করা হয়েছে ই-মিউটেশন, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ডিজিটাল রেকর্ড রুম, ডাকযোগে খতিয়ান ও পর্চা প্রাপ্তি, ডিজিটাল সার্ভেয়িং এবং ম্যাপিং, অনলাইনে জলমহাল ইজারা, ল্যান্ড জোনিং, অনলাইন শুনানি সিস্টেম, হটলাইন ১৬১২২ ইত্যাদি।
আইন সংস্কার, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা : ভূমির সমস্যা কমাতে আইন ও বিধির সংস্কার, নতুন আইন প্রণয়ন, সেবা সহজীকরণে নতুন পরিপত্র জারি এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এইচআরএমএস প্রবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে জোরদার করা হয়েছে মনিটরিং কার্যক্রম। নাগরিক ও অংশীজনের ভূমিসেবা সম্পর্কে সচেতন করতে নেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
যে সুবিধা পাবেন সেবাগ্রহীতারা : বর্তমানে সাধারণ নাগরিকরা ভূমি অফিসে না এসে অনলাইনে www.land.gov.bd ওয়েবসাইট ব্যবহার করে নামজারির আবেদন, অনলাইনে সার্টিফাইড পর্চা ও মৌজা ম্যাপের জন্য আবেদন করা এবং ঘরে বসেই খতিয়ান বা ম্যাপ পাচ্ছেন। নামজারির ফি অনলাইন পরিশোধ করতে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা যাচ্ছে।
ই-রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল ভূমিসেবার আন্তঃসংযোগ : ই-রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল ভূমিসেবা সিস্টেমের আন্তঃসংযোগের ফলে সাব-রেজিস্ট্রাররা জমি রেজিস্ট্রেশনের আগে ডিজিটাল রেকর্ডরুম থেকে জমির রেকর্ড অনলাইনে যাচাই করতে পারবেন। সহকারী কমিশনাররাও (ভূমি) রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন, দলিল ও বিক্রীত জমির তথ্য ই-মিউটেশন সিস্টেম। যার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামপত্তন কার্যক্রম শুরু হবে। সারাদেশে ই-রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে ই-মিউটেশনের সংযোগ হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে, রেকর্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হবে। ফলে মামলা-মোকদ্দমা ও জাল-জালিয়াতির সুযোগও কমে আসবে।
ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ : নামজারি করার সঙ্গে ম্যাপ ও খতিয়ান সংশোধন করা না হলে মূল সমস্যাটি থেকেই যায়। এ সমস্যা দূর করতে দেশের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় করা হয়েছে। এই ম্যাপের ওপরে স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লটভিত্তিক জমির শ্রেণির একটি তথ্যভান্ডার তৈরি হচ্ছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা : জমি ক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূমি মালিকানা সনদ প্রদান করা, সীমানা বিরোধ ও ভূমিদস্যুতা বন্ধে সর্বশেষ ডিজিটাল জরিপ করা ও বাড়িতে বসেই ভূমির অধিকাংশ সেবা নিশ্চিত করা অর্থাৎ ভূমি অফিসে কারও আসার প্রয়োজন হবে না সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
মন্তব্য করুন