- অন্যান্য
- ‘সন্তানরা লেখাপড়া শুরু করতে পারছে এটাই আনন্দের’
‘সন্তানরা লেখাপড়া শুরু করতে পারছে এটাই আনন্দের’
জীবন বদলে যাওয়ার গল্প শোনালেন রিক্তা রানি

রিক্তা রানি
বাড়ির সামনে গাছের ওপর মগডালে আটকা পড়েছিল বিশালাকার এক বেলুন। হঠাৎ ওই বেলুন দেখেই চমকে যান সিলেটের ওসমানীনগরের কাঁচপুরের আইলাকান্দি এলাকার জ্যোর্তিময় দেব ও রিক্তা রানি দেবের সন্তানরা। ওই দম্পতির স্কুলপড়ুয়া ছোট ছেলে জয়ন্ত দেবের বেলুন নামিয়ে আনতে উঠে পড়ে গাছের ডালে। এরপর বিশালাকার রঙিন বেলুন নিয়ে তিন ভাই-বোন ও প্রতিবেশিদের মধ্যে কী যে আনন্দ! এরপরের ঘটনাটি ছিল বেদনার! বেলুনটি নিজেদের ভাঙাচোরা মাটির ঘরে ঢোকানোর পরপরই ঘটে বিশাল বিস্ফোরণ। এতে গুরুতর আহত হন রিক্তার দুই সন্তান জয়দীপ দেব জনি ও জয়শ্রী জুঁই। দগ্ধ হওয়ার পর তাদের প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চরম অনটনের সংসারে ওই দুর্ঘটনায় তাদের মাথার ওপর নিয়ে আসে বাড়তি চাপ। উন্নত চিকিৎসার কথাও কল্পনাতেও ছিল না তাদের।
মঙ্গলবার রিক্তা রানি সমকালকে বলেন, ‘খুব কষ্টে ছিলাম। সন্তানদের নিয়ে বেঁচে রইব এই আশাও হারিয়ে গেছিলাম। এখন জীবনটা বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। সঞ্চয়পত্র কিনে রাখব। এর মাধ্যমে তিন সন্তানের লেখাপড়া করাব। ভাঙাচেরা ঘর, তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে কোনো মতে বেঁচে ছিলাম। এখন আমাদের সংকট কেটে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করি। আমাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ডা. সামন্ত লাল সেনের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর অনেকে বলেছিল আমার সন্তানদের হাত অবশ হয়ে যাবে। ওরা লেখাপড়া শুরু করতে পারবে না। এটা শুনে অনেক কেঁদেছি। এখন আমার সন্তানরা আবার লেখাপড়া শুরু করতে পারছে এটাই আনন্দের।’
রিক্তা রানি আরও বলেন, ‘কোথা থেকে গ্যাস বেলুন এসে বাড়ির গাছের ওপর আটকে পড়েছিল, এটা জানতাম না। পরে শুনেছি ময়মনসিংহের একটি অনুষ্ঠান থেকে গ্যাস বেলুন ছোঁড়া হয়েছিল। সেটা এসে আমাদের এখানে গাছে আটকা পড়ে। সন্তানরা বেলুন দেখে খুব খুশি হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর সিলেট ও ঢাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ওদের। এখন দুই ভাই-বোন ভালো আছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে দেবতার মতো পাশে এসে দাঁড়ান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আমার সন্তানদের চিকিৎসার সব খরচ বহন করেন। লন্ডন থেকে ফোনকল করে সবসময় খবর নিতেন। দেশে ফেরার পর আমার মতো গরিব মানুষের বাসায় এসেছেন। দুই সন্তানকে ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ান। প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতায় এবং আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ডা. সামন্ত লাল সেনের ও প্রচেষ্টায় সন্তানদের চিকিৎসা শেষে তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।’
গ্যাস দুর্ঘটনায় আহত রিক্তার পরিবারকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়। ডা. সামন্ত লাল প্রধান অতিথি হিসেবে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ভিপি।
মন্তব্য করুন