ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

আইসিসিবির গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

নথি ডিজিটালাইজ হলে রপ্তানি বাড়বে

নথি ডিজিটালাইজ হলে রপ্তানি বাড়বে

রোববার রাজধানীর একটি হােটেলে আইসিসিবি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলােচকরা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ১১:৩৪

রপ্তানির ক্ষেত্রে জাহাজীকরণে সব ধরনের নথি ‘ডিজিটালাইজ’ করা গেলে বাংলাদেশের এ সম্পর্কিত ১০ থেকে ১২ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হবে এবং বছরে শূন্য দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার বা সাত হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাড়তে পারে। এ ব্যবস্থা একদিকে যেমন সাশ্রয়ী, অন্যদিকে ক্রেতাও পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পায় এর মাধ্যমে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়ে। 

গতকাল রোববার ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডিজিটালাইজেশন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বনানীতে শেরাটন ঢাকা হোটেলে অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক ছিল আইসিবি-ডিএসআই। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সভাপতিত্ব করেন আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। 

সালমান এফ রহমান বলেন, আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে ডিজিটাইলাইজেশন একা বাংলাদেশের দায় নয়, ক্রেতা-বিক্রেতা দেশেরও ডিজিটাইলাইজ হতে হবে। তিনি বলেন, মুক্ত বাণিজ্যের মধ্যে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ব্যবসা স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে নানা ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা সৃষ্টি করছে। আবার কিছু দেশ নিজেদের মতো করে বাণিজ্যে নানা স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শ মান নির্ধারণ করছে। এতে বাংলাদেশের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সালমান এফ রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক কেবলসের ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন চলছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডিজিটালাইজেশন হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

বহু বছর ধরে রপ্তানি আয়ের যে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছিল, তা সম্প্রতি সংশোধন করা হয়েছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়হীনতার কারণে এতদিন রপ্তানি আয়ের ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠান দেশের মধ্যে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বিক্রি করলে তা একবার রপ্তানি আয় হিসেবে ধরা হতো। আবার গার্মেন্ট কোম্পানি পোশাক বানিয়ে বিক্রি করলে ওই কাপড়ের মূল্যসহ দ্বিতীয়বার পুরোটা রপ্তানি ধরে ফের রপ্তানি আয় বলে হিসাব হতো। এ কারণে এতদিন রপ্তানির ভুল হিসাব করত ইপিবি। এ ভুলটি সংশোধন করা হয়েছে। তবে ইপিবি যে হিসাবটি করত, তা এক অর্থে ঠিক। কারণ পণ্যটি বাংলাদেশের রপ্তানি। এ ছাড়া সিএমটি (কাট, ম্যাক অ্যান্ড ট্রিম) এলসির ক্ষেত্রে ক্রেতা কাঁচামাল পাঠিয়ে পণ্য তৈরি করে নেওয়ার পর তার পুরোটা বাংলাদেশের রপ্তানি ধরে আয় হিসাব হতো। এই ভুলগুলো সংশোধন করা হয়েছে।

সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআরকে পুরোপুরি ডিজিটাল হওয়ারও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যারা কর দেয়, এনবিআর শুধু তাদের কর বাড়ায়। এর পরিবর্তে করজাল বাড়ালে সবার উপকার হতো, সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়ত।

আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর সমুদ্রপথে সাড়ে চার কোটি জাহাজীকরণ নথির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর মধ্যে অনেক নথি এখনও কাগুজে। এটা যদি ডিজিটাল করা যেত, তাহলে খরচ কমত, আবার নথি পাঠানোর সমস্যাও দূর হতো। 

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, বাণিজ্যের কার্যকর ডিজিটালাইজেশন হলে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নেটওয়ার্ক আরও সম্প্রসারিত হবে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান হবে। 

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আইসিসিবির সহসভাপতি এ. কে. আজাদ এমপি বলেন, একটি এলসি খুলতে প্রায় ২০০ নথি প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়। কাগুজে নথি আবার সরাসরি বিদেশে পাঠাতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। এর মাধ্যমে মানবিক ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনে বিলম্বের মতো ঘটনাও ঘটে।

ইউএন স্ক্যাপের ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট এবং ইনোভেশন বিভাগের পরিচালক রূপা চন্দ্র বলেন, বাণিজ্যে ডিজিটালাইজ করতে পারলে বাংলাদেশের এ সম্পর্কিত ১০-১২ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হবে এবং বছরে শূন্য দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাড়বে।

তবে ডিজিটালাইজেশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সম্প্রতি তাঁর অফিসের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক হয়। সাইবার অপরাধীরা বাণিজ্য-সংক্রান্ত সব তথ্য কবজায় নিয়ে অর্থ দাবি করে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ব্যবস্থায় যাওয়ার বিপদও আছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিসির ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড ইনিশিয়েটিভ (ডিএসআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পামেলা মার। 

আরও পড়ুন

×