ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

পুলিশকে রাজনৈতিক ব্যবহারের বিপক্ষে ৮৯.৫% মানুষ

পুলিশকে রাজনৈতিক ব্যবহারের বিপক্ষে ৮৯.৫% মানুষ

ফাইল ফটো

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০০

বিরোধী দল বা মত দমনে সব সরকার কমবেশি পুলিশকে ব্যবহার করে। তবে বিগত ১৫ বছর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। এই সময়ে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। এর মধ্যে দিয়ে তারা একটি গোষ্ঠী বা দলের বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে পুলিশকে বের হয়ে আসতে হবে। পুলিশ সংস্কার কমিশন পরিচালিত জরিপে এমন প্রত্যাশা উঠে এসেছে।

‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক এই জনমত জরিপের ফল গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চায় ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দল-মত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চেয়েছে ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ভুয়া ও গায়েবি মামলার অবসান চায় ৯৫ শতাংশ মানুষ। আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চায় ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা বিবেচনায় অপরাধী পুলিশের জবাবদিহি ও শাস্তি চেয়েছে ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জরিপের এ ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে সর্বাধিক মতামত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চাওয়ার ক্ষেত্রে। এ ছাড়া দ্বিতীয় নিরপেক্ষ পুলিশ এবং তৃতীয় মতামত এসেছে দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চাওয়ার ক্ষেত্রে।

৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে। এ ছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত পুলিশ সদস্যকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছে ৬৮ দশমিক ২৭ শতাংশ মানুষ। ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করে, সভা-সমাবেশে পুলিশের অনুমতি নেওয়া মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৫৪ ধারায় পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে। জরিপে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করে, এই ধারা সহজে অপব্যবহারযোগ্য। এর যুগোপযোগী সংস্কার চেয়েছে ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ।

হেফাজতে (রিমান্ড) আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারার সংস্কার চেয়েছে ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ নারী আসামিকে শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের পক্ষে মত দিয়েছে। এ ছাড়া আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতি থানায় স্বচ্ছ কাচঘেরা কক্ষ তৈরির পক্ষে মত দিয়েছে ৮০ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ।

বাসাবাড়িতে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশির ক্ষেত্রে হয়রানি এড়াতে কার্যকর কল সার্ভিস চালুর পক্ষে মত দিয়েছে ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা। পাশাপাশি অভিযানের সময় জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ইউনিফর্ম পরিধানের ওপর জোর দিয়েছে ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। রাতে তল্লাশির ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি কিংবা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি চেয়েছে ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছে ৬০ শতাংশ মানুষ। পুলিশকে জবাবদিহি ও বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশন গঠনের কথা বলেছে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় পুলিশের জন্য স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার পক্ষে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছে।

বর্তমানে পুলিশের কিছু জনবান্ধব সেবামূলক কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ কল সার্ভিস। জরিপে অংশ নেওয়া ২৪ হাজার ৪৪২ জনের মধ্যে ১৩ হাজার ৮২৩ জন (৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ) এই সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম সন্তোষজনক বলেছে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং কার্যক্রমে ২৩ দশমিক ৬, থানায় অনলাইন জিডি কার্যক্রমে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশকে জনমুখী করতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সেই লক্ষ্যে গত ৩ অক্টোবর ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়। সংস্কারের জন্য সাধারণ মানুষের মত জানতে চেয়েছিল এই কমিশন। ‘কেমন পুলিশ চাই’ বিষয়ে ১৭টি প্রশ্ন করা হয় ওয়েবসাইটে। এই প্রশ্নে দেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ২৪ হাজার ৪৪২ জন উত্তর দিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ১৯১ এবং নারী ১ হাজার ২৫১ জন। সর্বোচ্চ অংশগ্রহণকারী ঢাকা জেলার, ৪ হাজার ৯৬৮ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম জেলায়, ১ হাজার ৮৩৮ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ কুমিল্লায়, ১ হাজার ২২৮ জন। 

উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা বেশি, ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে আছে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-যুবক, ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষ সবচেয়ে কম অংশ নিয়েছেন, শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। পেশাভিত্তিক ১৪টি বিভাগে সর্বোচ্চ উত্তরদাতা চাকরিজীবী, ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী, ২৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যবসায়ী ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন

×