ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা লজ্জাকর: মুখ্যসচিব

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা লজ্জাকর: মুখ্যসচিব

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ০৬:১৪ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১৪:০৯

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর সরকারের বিচক্ষণ পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তি পেয়েছে। এমন অবস্থায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা লজ্জাকর। 

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের সিনিয়র অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন নিজ নিজ খাতের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন।

তারা বলেন, এক যুগ ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল হিসেবে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। ধান উৎপাদন, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বেড়েছে। করোনার টিকা প্রয়োগে সফলতা এসেছে। বৈশ্বিক করোনার মধ্যেও বিশ্বের অনেক দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে অর্থনীতিরি বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। 

এর আগে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে পরিস্থিতি জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে গণভবন থেকে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বক্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সল্লীম উল্লাহ ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন তারা।

মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, এক যুগ ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল হিসেবে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। উৎপাদন, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বেড়েছে। করোনার মধ্যেও বিশ্বের অনেক দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির তুলনা হতে পারে না। এ ধরনের তুলনা লজ্জার।

ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগে থেকেই অর্থনীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সচিবদের কাছ থেকে তারপরও বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখনও ঝুঁকি সীমার অনেক নিচে রয়েছে। ভবিষ্যতে ঋণের এই অবস্থান ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্নিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে অনেক জাতীয় অর্জন আছে। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণে অগ্রগতি, করোনার মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি- সব মিলিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। তারপরও কেউ কেউ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করছেন। এধরনের তুলনা কিছুতেই কাম্য হতে পারেনা।

অর্থসচিব বলেন, বিদেশি ঋণ গ্রহণের আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নিরাপদ সীমার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা সীমার বাইরে ছিল। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ঋণই নমনীয়। গড়ে সুদের হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে সুদে ঋণ নিয়েছে।

ইআরডি সচিব বলেন, বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিচক্ষণ। সুদের হার নমনীয়। পরিশোধের সময়সীমা দীর্ঘ। আবার শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক ঋণ ছিল। বাংলাদেশের এ ধরনের ঋণ নেই। ফলে বিদেশি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ কোনো ঝুঁকিতে নেই।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বলেন, অর্থনীতির সব সূচক সুন্দরভাবে এগিয়ে চলছে। শ্রীলঙ্কা সংকটের আগে কেউ বাংলাদেশের অর্থনীতির ঝুঁকি নিয়ে কোনো কথা বলেনি। করোনাকালেও এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। এখন হঠাৎ এ ধরনের তুলনা কাম্য হতে পারে না।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে ঢালাও কর ছাড়কেও দায়ী করা হয়। বাংলাদেশ অন্ধের মত এরকম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যে খাতে কর ছাড় দিলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে সেখানে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। 

উদাহরণ হিসেবে বৈদ্যুতিক পণ্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, কর ছাড়ের ফলে এসব পণ্য দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এতে এ খাতে আমদানি ৮০ শতাংশ কমেছে। বাজার বেড়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। অন্যান্য খাতেও করছাড়ের একরম সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

জ্বালানির মূল্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই 

এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কথা চিন্তা করছে না সরকার। 

এক প্রশ্নের জবাবে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশেও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে কথা চিন্তা করে ১ কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে কম মূল্যে পণ্য কেনা যাবে। তবে জ্বালানি তেল এবং গ্যাস সরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়। বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে এমন কোনো চাপ তৈরি হবে না, যাতে বাংলাদশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে। তারপরও এ বিষয়ে সরকার সতর্ক আছে। পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দর বৃদ্ধির চাপে রয়েছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি কমানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থসচিব বলেন, বাজেটে ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা নেই সরকারের। জনদুর্ভোগ যাতে না কোনভাবেই না বাড়ে সে ব্যপারে সরকার সতর্ক রয়েছে।

চীনা ঋণের ফাঁদে নেই বাংলাদেশ 

চীন থেকে নেওয়া ঋণের ফাঁদে শ্রীলঙ্কা এ পরিস্থিতিতে পড়েছে। 

বাংলাদেশের তেমন আশঙ্কা আছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব বলেন, বাংলাদেশ এরকম কোনো ফাঁদে পড়ার পরিস্থিতিতে নেই। কারণ, মোট বিদেশি ঋণে চীনের মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কখনোই কোনো দেশের ওপর এককভাবে নির্ভর করেনি। ঋণ নিয়ে কোনো ধরনের বিলাসী প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এমন কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি, যা লাভজনক নয়। চীনের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

আরও পড়ুন

×