বৈশাখ
হালখাতা বাঁধা পড়ছে লালখাতা বদলে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ২৩:১৬
এই তো কয়েক যুগ আগেও বাহারি সব অনুষঙ্গে উদযাপিত হতো হালখাতা। পুরোনো বছরের হিসাব চুকিয়ে গ্রাহককে মিষ্টিমুখ করাতেন আর লালসালু মোড়ানো নতুন জমা-খরচের খাতা খুলতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাংলা নববর্ষের হাত ধরে চলা এই হালখাতা পুরোনো ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। হালখাতা উৎসব আর হয় না বললেই চলে। নতুন লালখাতা খুলেই নতুন বছরের হালখাতার কাজ শেষ করে ফেলেন অনেকেই।
বাঙালি সমাজে হালখাতার এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য পুরান ঢাকার দোকানিরা অবশ্য এখনও তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার, বাংলাবাজার ও ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা জানালেন, জাঁকজমকের সঙ্গে হালখাতা উদযাপন না করলেও নতুন বাংলাবর্ষের প্রথম দিনে লালসালু মোড়ানো খাতা দিয়ে হিসাব শুরু করবেন তারা। ব্যবসায়ীদের কাছে এখন হালখাতা মানে নতুন বছরে নতুন লালখাতা বা নতুন হিসাব খোলা। হালখাতা বাঁধা পড়ছে এখন নেহাত লালখাতা বদলে।
হালখাতা উৎসব উদযাপন করা হতো রাজাদের খাজনা প্রদানের 'পুণ্যাহা' অনুষ্ঠানের রীতি ধরে। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে রং-বেরঙের কার্ড পাঠিয়ে হালখাতার দাওয়াত দিতেন। পাঠাতেন মিষ্টি ও উপহার। ভোক্তারা পহেলা বৈশাখের দিন এসে পুরোনো হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাব খুলতেন।
কিন্তু এখন আর কার্ড বা চিঠির মাধ্যমে বকেয়া হিসাব স্মরণ করিয়ে দিতে হয় না। তার স্থান নিয়েছে ই-মেইল ও মোবাইল হিসাব। অনেকেই এখন কার্ডে কেনাকাটা করেন, বকেয়া পরিশোধ করেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, লক্ষ্মীবাজার ও বাংলাবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুব কম ব্যবসায়ীই এবার নববর্ষ উপলক্ষে দোকানপাট ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করছেন। অবশ্য গলির বড় পাইকারি দোকানের পাশাপাশি খুচরা দোকানিরাও লালখাতা বিক্রি করছেন। আকার ও মানভেদে প্রতিটি খাতা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে দেড় হাজার টাকায়।
বাংলাবাজারের তাহেরা বুক হাউসের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন তো হালখাতা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিও খুব কম দেওয়া হয়। হালখাতার জন্য সারা বছর বসে না থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়েই পাওনা টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। তবে পহেলা বৈশাখের দিন গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীদের এমনিতেই মিষ্টিমুখ করানো হয়।
শাঁখারীবাজারের আদি ধামরাই বাসনালয়ের মালিক অতুল চন্দ্র্র বিশ্বাস বলেন, আমাদের ব্যবসা যদি আগের অবস্থায় থাকত, তা হলে আপনার সঙ্গে এখন কথা বলারই সুযোগ হতো না। কিন্তু করোনার কারণে ব্যবসায় এখনও মন্দা চলছে। লাভ কম, খরচ বেশি। যেসব বকেয়া আছে, তা পূজার সময় উঠে আসতে পারে।
বাংলাবাজারের খন্দকার বুক ডিপোর ফারুক আহমেদ জানালেন, বাপ-দাদার আমলের আদি কার্ড ছাপানোর ব্যবসাটি তিনি ধরে রেখেছেন। হালখাতা উপলক্ষে এখনও পুরান ঢাকা ও বাইরে থেকে কম-বেশি কার্ড ছাপানোর অর্ডার আসে। তবে এখনকার কাজে আগের মতো আড়ম্বর নেই।
ঢাকেশ্বরী শঙ্খ শিল্পালয়ের দীপক বলেন, ব্যবসা-হালখাতা এসব আর কিছুই আগের মতো নেই। পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষায় এখানে বসে আছি। এখন শুধু পারিবারিক পরম্পরা অনুযায়ী হালখাতা পালন করা হয়। পহেলা বৈশাখের দিন গণেশ ঠাকুরের নামে পূজা করা হবে। লালখাতার মধ্যে সিঁদুরের ফোঁটায় এক টাকার কয়েনের ছাপ দিয়ে নতুন হিসাব খোলা হবে। গ্রাহকরা এলে মিষ্টিমুখ করানো হবে। না করলে হয় না, তাই করা। ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে করে মনে কোনো আনন্দ জাগে না।
- বিষয় :
- হালখাতা
- হালখাতা উৎসব
- বাংলা নববর্ষ