ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউজিসির প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ সংসদীয় কমিটির

ইউজিসির প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ সংসদীয় কমিটির

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১৩:৪৫

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদনে ৪৬টি প্রকল্পের বাস্তব ও আর্থিক অগ্রগতি সমান দেখানোয় এই প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটি এই তথ্য ফের যাচাই এবং তথ্য ভুল প্রমাণ হলে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো, শিক্ষার মান, গবেষণাসহ উন্নয়নবিষয়ক ৪৬টি প্রকল্প চলমান। ইউজিসির আওতাধীন এসব প্রকল্পের সবক'টিরই বাস্তব ও আর্থিক অগ্রগতি সমান। এ বিষয়টি অসম্ভব মনে করছে সংসদীয় কমিটি। টেবিলে বসে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছে কমিটি। একই সঙ্গে কমিটির পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া এবং বারবার সময় বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে দেখা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে ৮টি, ৫০ শতাংশের নিচে ১৬টি এবং ৫১ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে ২২টি।
সূত্র জানায়, কমিটির বৈঠকে ইউজিসির উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান প্রকল্পের সবক'টিরই বাস্তব ও আর্থিক অগ্রগতি হুবহু একই। এমন মিল নিয়ে কমিটির একাধিক সদস্য প্রশ্ন তুলে বলেন, দু-একটির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সমান হলেও সবক'টির ক্ষেত্রে সমান হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাস্তবতার ভিত্তিতে প্রতিবেদন না করে টেবিলে বসে এটি করা হয়েছে বলেও কমিটির সদস্যরা মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ইউজিসির প্রতিনিধিরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়া এবং বারবার সময় বাড়ানোর জন্য প্রকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাস্তবায়নে সফলতা না থাকলেও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিদেশ যাওয়া এবং গাড়ি কেনার প্রবণতাও লক্ষণীয় বলে অভিযোগ করেন কমিটির সদস্যরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, বাস্তব ও আর্থিক অগ্রগতি একই হওয়ার বিষয়টি ইউজিসির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তাদের কর্মকাণ্ডে গাফিলতি রয়েছে বলে কমিটির মনে হয়েছে। কমিটি মনে করছে, প্রকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা নিরূপণ করে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। একটি বিষয় খুব বেশি দেখা যায়- প্রকল্প হলেই গাড়ি কেনার দিকে ঝোঁক বেশি থাকে। বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই; কিন্তু আর্থিক ব্যয় বেশি। সব মিলিয়ে দৈন্যদশা মনে হয়েছে। কোনোটাই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তিনি আরও জানান, প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির দায় কে নেবে? এ জন্য ব্যর্থতার দায়ে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুশাসন দেওয়া হয়েছে।

কার্যপত্রে দেখা গেছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তব ও আর্থিক অগ্রগতি দুটোই সমান। এর অগ্রগতি হয়েছে ২২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৭২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৫২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ২৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। বুয়েটের শিপ মডেল টেস্টিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৩৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৪২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৬৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৯৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা স্থাপন উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৪৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৬৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

এদিকে সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারা কয়েকটি প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে নেওয়া প্রকল্পটি গত ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ২৬ শতাংশ। আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মূল মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি ৩ দশমিক ২০ শতাংশ। অবশ্য ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সিলেট ও মৌলভীবাজারে স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের সময়সীমা ছিল গত বছরের ডিসেম্বর। কিন্তু এরও কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। এই প্রকল্পটির মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ব্যানবেইসের এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেডেট এডুকেশন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল গত ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এর কাজের অগ্রগতি ৫২ শতাংশ। ব্যানবেইসের আরেকটি প্রকল্পের মূল মেয়াদ গত এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×