সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে বললেন জ্বালানি উপদেষ্টা

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১২:৪৫ | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২২ | ০১:২১
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, জ্বালানি চাহিদা পূরণে দেশব্যাপী সৌরশক্তি কাজে লাগাতে হবে। তাহলে অন্যান্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দূরদৃষ্টি ও সাহসিকতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সেই ভিশনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে আমাদের সৌরশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে দেশবাসীকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও সচেতন হতে হবে। আমাদের বর্তমান চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে নীতিমালা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রোববার (৭ আগস্ট) জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটি (বিইএস) আয়োজিত 'বাংলাদেশে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভিশন' শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

ওয়েবিনারে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ছিলেন প্রধান অতিথি। বিইএস-এর সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এছাড়া, সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি কনসাল্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আবদুস সালেক (সুফি)। আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম; একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু এবং জিই গ্যাস পাওয়ারের (দক্ষিণ এশিয়া) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপেশ নন্দ। সারসংক্ষেপ আলোচনা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য এবং বিইএস-এর সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি জোগানের সকল উৎসকে বিবেচনায় রেখে কাজ করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সরকারের পাশাপাশি এই খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহার, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার এবং ক্লিন এনার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য আরও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে স্মল মড্যুলার রিয়েক্টর (এসএমআর) সিস্টেমের মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও ভাবা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রাথমিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সকল বিকল্প উৎস নিয়ে কাজ করতেও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন।
বিইএস-এর সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের খনিজসম্পদও ক্ষতির সম্মুখীন। তাই জ্বালানির ব্যবহারে যথাসম্ভব সাশ্রয়ী হতে হবে এবং বিকল্প সমাধানগুলো কাজে লাগাতে হবে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম বলেন, বাংলাদেশ তেল ও গ্যাস আমদানিকারক একটি দেশ। আমাদের মোট জ্বালানির বড় একটি অংশ তেল ভিত্তিক। আগে আমরা শুধু তেলের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতাম। গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তা দিতে হতো না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে। তাই যথাযথ নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে সরকারের ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে সক্ষম হলেও জ্বালানি খাতে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। তবে যুগোপযোগী পলিসি নির্ধারণ, স্থানীয় বিনিয়োগ এবং সরকারি খাত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা জ্বালানি চাহিদা পূরণে সক্ষম হতে পারব।
একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, বিগত দুই বছর গোটা বিশ্ব যখন কোভিডের আঘাতে নাজেহাল তখন বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা সামাল দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। তবে জ্বালানি সংকট ও সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় আমাদের আরও তৎপর হতে হবে।
জিই গ্যাস পাওয়ারের (দক্ষিণ এশিয়া) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপেশ নন্দ বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ অর্থনীতি গ্যাস ভিত্তিক হওয়ায়, হাইড্রোজেন ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মিশ্রণ ব্যবহারে অনেক সুবিধা রয়েছে। এভাবে আরও গ্রিনার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব। জিই জ্বালানি স্থানান্তরের প্রতিটি পর্যায়ে অন-গ্রাউন্ড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সমাপনী বক্তব্যে বিইএস-এর সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, জ্বালানি সংকট একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সময়সাপেক্ষ। তবে আমরা যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন, জ্বালানির দাম ধারাবাহিকভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে আসন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঠেকানো পারব। সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে আমরা বর্তমান সংকট মোকাবেলায় সক্ষম হবো।
প্রসঙ্গত, বিইএস একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে নীতি-নির্ধারণে সহায়তা এবং জ্বালানির সঠিক ও যুগোপযোগী ব্যবহার সম্পর্কে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করাই এর মূল লক্ষ্য।