নাগরিক সভা
কৃষিজমি রক্ষা ও মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

নাগরিক সভায় বক্তারা- সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ০৪:১৩ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ০৪:৩৬
মোংলা বন্দর ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় পশুর নদ খননের বালুর কবল থেকে খুলনার দাকোপ উপজেলার বাণীশান্তা এলাকার কৃষিজমি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার কৃষিজমি রক্ষার তাগিদ দিলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করছেন। বহু বিকল্প জায়গা থাকার পরও বাণীশান্তার ৩০০ একর তিন ফসলি কৃষিজমিতেই বালু ফেলার চেষ্টা চলছে। এর প্রতিবাদে আন্দোলনরত এলাকাবাসীকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা, জনগণকে হুমকি ও কৃষিজমি ধ্বংসের পরিকল্পনার অপরাধে মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে নাগরিক সভায় এ দাবি জানান বিশিষ্টজনরা। সভার আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাক, নিজেরা করি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল।
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, উন্নয়ন কখনো জাতির লক্ষ্য হতে পারে না। জনস্বার্থকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উন্নয়ন করা হয়। উন্নয়ন করা মানে এই নয় যে যেখানে উন্নয়ন হবে সেখানকার মানুষের জনস্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে। যতদিন পর্যন্ত সিদ্ধান্তের পরিবর্তন না আসবে ততদিন পর্যন্ত আমরা বানিশান্তার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এ আন্দোলন চালিয়ে যাব। কোনোভাবেই নদী রক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।
নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশি কবির বলেন, মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান এখন যে কাজ করছেন সেটা দেশের বিরুদ্ধে কাজ। উনি তো বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক। উনি এখন যা করছেন তা ওনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তিনি নিজেকে ওখানকার রাজা মনে করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট বলতে চাই- যারা নিজেদেরকে এভাবে রাজা মনে করে তাদেরকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পুরোপুরি মিথ্যাচারের মধ্য দিয়ে তিনি এ জমি ধ্বংস করতে চাচ্ছেন। তাই আমরা এ দাবি তুলছি। উন্নয়ন আর অবকাঠামো এক নয়। আগে দেখতে হবে জনগণ খাবার পাচ্ছে কিনা, তারা ভালো আছে কিনা। আগে জনগণের স্বার্থ দেখতে হবে। জনগণের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে- এ রকম কোনো কাজ করে উন্নয়ন করা যাবে না।
লিখিত বক্তব্যে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০২০ সালে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদী ড্রেজিং সংক্রান্ত ‘মোংলা বন্দর ইনারবার ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের অধীনে পশুর নদীর ড্রেজিংকৃত বালুমাটি ফেলার জন্য এক হাজার একর জমি হুকুম দখলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলাধীন বানীশান্তা ইউনিয়নের তিনশ' একর তিন ফসলী উর্বর কৃষিজমি। বালি ফেলার কারণে এ জমিতে শুধুমাত্র শস্য চাষই ব্যাহত হবে না, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকার প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম সংস্থান- পুকুর, জলাশয়, মৎস্য সম্পদ ও গবাদি প্রাণী। ফলে ওই এলাকার প্রায় এক হাজার পাঁচশ' পরিবারকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।
বানিশান্তার কৃষক বৈশাখী মণ্ডল বলেন, সারাদেশের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি কাজ করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। আমাদের কৃষিজমি চলে গেলে আমরা সর্বহারা হয়ে যাব। এ কৃষিজমি আমাদের অস্তিত্ব। আমাদেরকে বাঁচতে দিন।
আরেক কৃষক হিরাময় রায় বলেন, আমরা বংশপরম্পরায় কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের বহিরাগত বলে দাবি করেছে। আমরা পূর্বপুরুষ থেকে সেখানে বসবাস করি। আর এখন বহিরাগত হয়ে গেলাম। সংখ্যালঘু বলে এখন আমাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।
- বিষয় :
- মোংলা বন্দর
- ড্রেজিং
- পশুর নদ
- বাণীশান্তা