ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

পরিবর্তিত অফিস সময়ের প্রজ্ঞাপন

সুস্পষ্ট নির্দেশনা চান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

সুস্পষ্ট নির্দেশনা চান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

বাহরাম খান

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ১৪:০৪

সরকার ঘোষিত নতুন অফিস সময় কত দিনের জন্য পরিবর্তন করা হলো, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা চান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, হঠাৎ করেই এমন একটা নির্দেশনা এসেছে। এতে দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত এবং অফিস কর্মব্যবস্থাপনায় নতুন পরিকল্পনা করবেন নাকি কয়েক দিনের জন্য মানিয়ে চললেই হবে- এটা জানলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাদের নিজের মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। তাঁদের কেউ কেউ ফোন করে গণমাধ্যম অফিস বা ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকদের এমন অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে গতকাল বুধবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সমকালকে বলেন, 'নতুন অফিস সময় শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ভালোই মনে হচ্ছে। তবে সপ্তাহখানেক না গেলে এর খারাপ-ভালো বোঝা যাবে না। নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হতেও কয়েকদিন সময় লাগে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রজ্ঞাপনে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়মে চলবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এ ব্যবস্থা কত দিন থাকবে সেটা জানানো হবে।' কিন্তু কবে জানানো হবে তা বলতে পারেননি প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-৪ শাখা থেকে নতুন অফিস সময়ের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এরপর বিচার বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে অফিস সময় পরিবর্তনের পৃথক পৃথক অফিস আদেশ জারি হয়েছে। কোনো আদেশেই কত দিনের জন্য এই নিয়ম চালু করা হয়েছে তা উল্লেখ নেই। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এটা সাময়িক পদক্ষেপ। কিন্তু কত দিনের জন্য, সেটার উত্তর মিলছে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মেহেদী-উল শহীদ স্বাক্ষরিত সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, 'পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত' রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস চলবে। জনপ্রশাসন সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শীত ও গরম ঋতুর সময় প্রতি বছরই পরিবর্তন হয়। সেগুলো আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। বাংলাদেশেও এমন নিয়ম চালু করলে সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে সবাই তাঁদের পরিকল্পনা ঠিক করতে পারেন।

বুধবার তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবদের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। নতুন অফিসসূচি নিয়ে তাঁদের কেউই পূর্ণ সন্তুষ্টির কথা বলেননি। তাঁদের মধ্যে দু'জনই বলেছেন, তাঁদের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানতে চাচ্ছেন এই নিয়মটি কত দিনের জন্য চলবে। সচিবালয়ের চার নম্বর বিল্ডিংয়ের একজন যুগ্ম সচিব মর্যাদার কর্মকর্তার কাছে তাঁর অধীন এক উপসচিব বলেন, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু'জনই চাকরিজীবী। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই সন্তানকে স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজটি কষ্ট করে সামলান। এখন সকাল সকাল অফিস ও স্কুল হওয়ায় সেটা আরও দুরূহ হয়ে পড়েছে। ওই কর্মকর্তা তাঁর বসকে বলেন, সরকার নিয়মটা কয়দিনের জন্য করল তা জানলে ভালো হতো। যদি কম দিনের জন্য হয় তাহলে কষ্ট করে সামলে নেবেন। না হলে গ্রামে আত্মীয়ের মধ্য থেকে কাউকে এনে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন তিনি।

যেমন ছিল প্রথম দিন :গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারিত নতুন অফিস সময়ের প্রথম দিন গেল। পরিবর্তিত অফিস সময়ের প্রথম দিন ভালোমন্দ মিলিয়ে পার করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যাঁদের সকালে সন্তানদের স্কুলে দেওয়ার তাগিদ নেই তাঁরা যানজট ছাড়া তেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হননি। যাঁরা সন্তানদের স্কুলে দিয়ে অফিসে যাওয়ায় অভ্যস্ত ছিলেন তাঁদের সময় ব্যবস্থাপনা এবং যানজট দুই সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম দিন তাঁর সন্তানকে স্কুলে দিয়ে ঠিক সময়ে মন্ত্রণালয়ের পৌঁছাতে পারেননি। তাঁর রিপোর্টিং বসকে জানিয়ে আধাঘণ্টা পর অফিসে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে দেখা হতেই এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই কিছু লেখেন, এভাবে সকালে স্কুল ও যানজটের ধকল নেওয়া সম্ভব নয়। যদি সপ্তাহ দুয়েকের জন্য হয় তাহলে ভিন্ন বিষয়। কষ্ট করে সামলে নেব। কিন্তু কতদিন এই নিয়ম চলছে তা না জানলে এটা মানসিক চাপ তৈরি করবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আগারগাঁওয়ে তাঁর অফিসের কাছেই বাসা এবং সন্তানের স্কুল। সকাল ৭টার দিকে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আবার বাসায় গিয়ে খাওয়া-গোসল সেরে অফিসে যেতেন। গতকাল নতুন অফিসের জন্য তাঁর রুটিন পরিবর্তন করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আমার বাসা, কর্মস্থল ও সন্তানের স্কুল কাছাকাছি থাকায় তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যাঁদের বাসা দূরে তাঁদের জন্য এত সকালে অফিসে আসা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।

আরও পড়ুন

×