ঢাকা রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

হেঁয়ালি বর্ষা

হেঁয়ালি বর্ষা

হঠাৎ বুধবার দুপুরে বৃষ্টি নামে কুমিল্লা নগরে। দুই ঘণ্টার বর্ষণে নিচু এলাকায় পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। এ সময় দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউর ছবি এন কে রিপন

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০

রূপ যেন বদলে ফেলেছে বর্ষা। মেঘ থেকে জল নামাতেও কিছুটা হেঁয়ালি। যেমন ২০১৯ সালে বর্ষা আগ্রাসী হয় ২০ জুন; যার রেশ ছিল অক্টোবরজুড়ে। শেষ তিন বছরে বর্ষা শুরুর সময়টা পেছাতে পেছাতে ঠেকেছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে।

এবার মৌসুমের মাঝামাঝি এসে বর্ষা সক্রিয় হলেও হারিয়েছে নান্দনিক ছন্দ। বর্ষণেও আছে খামখেয়ালি। কোথাও ঝমঝমিয়ে বারিধারা; আবার কোথাও মাঠ-পথপ্রান্তর খটখটে। গেল ১৫ বছর বর্ষার এমন ধীরলয়ে চলা, যা এবার ভিন্নমাত্রা নিয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকায় বৃষ্টির জন্য প্রয়োজন আগ্রাসী নিম্নচাপ। গত আগস্টে সাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হলেও সেটার মেজাজ তেমনটা ছিল না। ফলে বৃষ্টিও সবখানে সমান হয়নি। এখনকার খবর হলো, আবার সাগরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ, সঙ্গে নিয়ে আসছে বৃষ্টি। এর প্রভাবে টানা চার দিন সারাদেশে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। কমবেশি এই বৃষ্টি থাকতে পারে অক্টোবর পর্যন্ত।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সমকালকে বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে। এটি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে।

এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী শনিবার ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা রাজ্যের মাঝামাঝি কোনো একটি স্থান দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে। নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা নেই। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী শনিবার থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে এ দুই জেলায় ভারি বৃষ্টি হতে পারে। রোব ও সোমবার সারাদেশে হতে পারে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি। এই বৃষ্টি চলতে পারে বুধবার পর্যন্ত।

এই বর্ষা মৌসুমে এবারই প্রথম টানা চার দিন দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এ আবহাওয়া গবেষক বলেন, ঋতুচক্রের হিসেবে বর্ষা আসে জুনের শুরুতে। বর্ষা আসতে দেরি হতে হতে এবার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ভরা বর্ষায়ও সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ৪২ বছরের মধ্যে এবার জুলাই ও আগস্টে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। জুলাইয়ে গড় বৃষ্টি হয়েছে ২১১ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম। আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শক্তিশালী নিম্নচাপ হলে বিশাল এলাকাজুড়ে ছোট ছোট মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। পরে সেগুলো জোড়া লেগে হয় বড় মেঘপুঞ্জ। তা থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নামে বৃষ্টি। এবার তেমনটি হয়নি। এ ছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এ বছর সেটি বাংলাদেশে না এসে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণ হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছর বর্ষার আসা-যাওয়া দেরিতেই হচ্ছে। বর্ষার সময়কাল ১০ থেকে ১৫ দিন সরে যাচ্ছে। আগে জুনের শুরুতে বর্ষা শুরু হতো। আর শেষ হতো সেপ্টেম্বরের শেষে। এখন বর্ষা শুরু হতেই আগস্ট লেগে যাচ্ছে। আর শেষ হতে অক্টোবর কিংবা নভেম্বর পর্যন্ত লাগছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপ। সেপ্টেম্বরে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মৌসুমি ভারি বৃষ্টির কারণে কিছু স্থানে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদি বন্যাও হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বর্ষা দেরিতে আসার পেছনের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।

আরও পড়ুন

×