ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মানবাধিকার কমিশন, দুদক ইসিকে শক্তিশালী করা হবে

মানবাধিকার কমিশন, দুদক ইসিকে শক্তিশালী করা হবে

তাসনিম মহসিন

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ | ২৩:২২

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন (ইসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), তথ্য কমিশনসহ এ ধরনের সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী ও কার্যক্রমের দিক থেকে সক্রিয় করবে বাংলাদেশ। মানবাধিকার পরিষদের ভোট সামনে রেখে জাতিসংঘের কাছে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ প্রতিশ্রুতি গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জমা দিয়েছে ঢাকা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ভোট আজ। ২০২৩ সালে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে মর্যাদাপূর্ণ মানবাধিকার পর্ষদের পদটি নিজের ঘরে আনতে চায় ঢাকা। মানবাধিকার পরিষদে স্থান করে নিতে জাতিসংঘের কাছে মানবাধিকার উন্নয়নে জাতীয় পর্যায়ে ২০টি এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে ১৪টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জমা দেওয়া ওই মানবাধিকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে সরকার বলেছে, বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার সব নাগরিকের জন্য সুরক্ষিত হবে, যা বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে। বাংলাদেশের সংবিধান এর প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারেরও নিশ্চয়তা দেয়। গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বহুত্ববাদ সমাজের বিষয়ে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা প্রকৃত ও গঠনমূলক সংলাপ, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং শ্রদ্ধার ওপর নির্মিত। বিচার বিভাগকে স্বাধীন উল্লেখ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে শক্তিশালী, অবাধ ও মুক্ত উল্লেখ করে গণমাধ্যমের সংখ্যা জানানো হয়।

পাশাপাশি মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষায় ৩ হাজার ৭৫টি নাগরিক সমাজের সংস্থা বা এনজিও কাজ করছে বলে জাতিসংঘকে জানায় সরকার। আর বাংলাদেশে সক্রিয় স্বাধীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রয়েছে বলেও জানানো হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারের ৯টির মধ্যে ৮টি সনদ সই করেছে জানিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ কীভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সঙ্গে সব সময় যুক্ত ও যোগাযোগ রেখে কাজ করেছে, তা তুলে ধরা হয়। এতে রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরে সরকার। দেশের অভ্যন্তরে বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের কাছে ঐচ্ছিকভাবে ২০টি প্রতিশ্রুতি করে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক আইন ও মানের সঙ্গে সংগতি রেখে জাতীয় আইনকে প্রয়োজন অনুযায়ী সংযোজন ও সংশোধন করবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা ও যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ইসি, দুদক, পিএসসি এবং তথ্য কমিশনসহ এ ধরনের সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী এবং কার্যক্রমের দিক থেকে সক্রিয় করবে বাংলাদেশ। তাদের পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও মানবসম্পদ দেওয়া হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষার জন্য 'ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লান' তৈরি করা হবে।

প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সংসদীয় কমিটিকে করা হবে আরও সক্রিয়, নীতি তৈরির সময়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সবাইকে নিয়ে আলোচনা করা হবে, বৈষম্যবিরোধী আইন এবং প্রমাণ আইন সংশোধন করবে, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত বাড়ানো হবে, শ্রমিকের অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। জাতিসংঘের কাছে জমা দেওয়া ৯ পৃষ্ঠার প্রতিশ্রুতিতে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরেছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আজ মঙ্গলবার ১৪টি শূন্য আসন পূরণে গোপন ব্যালটে মানবাধিকার পর্ষদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চার আসনের বিপরীতে বাংলাদেশসহ মোট ছয়টি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দেশগুলো হলো- দক্ষিণ কোরিয়া, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও কিরগিজস্তান। বাহরাইন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে বাংলাদেশের জন্য জয় পাওয়া অনেকটা সহজ হবে। কূটনীতিকরা ধারণা করছেন, এশিয়া গ্রুপ থেকে মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ নির্বাচিত হবে।

আরও পড়ুন

×