উচ্চ মুনাফার ফাঁদে ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ
গ্রাহকের টাকা মেরে ফ্ল্যাট-গাড়ির মালিক আজাদ
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২ | ১২:১৭ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ | ১২:১৭
উচ্চ হারে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ৭ হাজারের বেশি গ্রাহকের প্রায় ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রধান খন্দকার আবুল কালাম আজাদ। অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ৬০টি মামলা হয়। সেগুলোর ৩৬টিতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি গা-ঢাকা দেন। প্রায় পাঁচ বছর তিনি পালিয়ে ছিলেন। অবশেষে মঙ্গলবার রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব এসব তথ্য দেয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে আজাদ ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি কিনেছেন। তাঁর স্ত্রীর নামে পোস্ট অফিসে ২০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানের নাম করে কুষ্টিয়াতে ১৫ বিঘা জমি, একটি ছয়তলা ভবন, একটি ইটের ভাটা ও রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি কিনেছেন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ২০০৩ সালে আজাদ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি চালু করেন। উচ্চ মুনাফার কথা বলে তিনি বিপুল অর্থ জামানত হিসেবে নেন। ২০১৩ সাল থেকে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে 'জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড' নামে কার্যক্রম শুরু করেন। মূলত পরিবারকেন্দ্রিক ব্যবসা শুরু করে তিনি তাঁর স্ত্রী, ছোট ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মিলে প্রতিষ্ঠানটি চালাতেন। বিপুল অর্থ হাতিয়ে ২০১৭ সালে প্রতিটি জেলা থেকে অফিস গুটিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সবাই লাপাত্তা হন। হাজার হাজার মানুষ সারা জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তাঁরা মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
র্যাব জানায়, ২০১৭ সালে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ফোন নম্বর বন্ধ করে ঢাকার উত্তরায় গা-ঢাকা দেন আজাদ। পালানোর সময় মাঠ পর্যায়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ টাকা। মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তাঁর সঙ্গে আট শতাধিক কর্মী ছিলেন। তাঁদের কোনো বেতন দেওয়া হতো না। তাঁদের গ্রাহকের বিনিয়োগ থেকে পাওয়া বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির টার্গেট ছিল দিনমজুর, চায়ের দোকানি, মুদি দোকানি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তাঁরা ব্যাংকের মতোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ কার্যক্রম চালাতেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজাদ ছাত্র অবস্থায় ইটের ভাটার ব্যবসা, ঠিকাদারি, কুষ্টিয়ার স্থানীয় পত্রিকা ও একটি জাতীয় পত্রিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। পরে নিজে প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন জেলায় ৪০টির মতো শাখা চালু করেন। এ ছাড়া তিনি 'ঠিকানা লিভিং লিমিটেড' নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরি ও বিক্রি করতেন।