ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

মৃত ২৬ জন নিয়মিত তুলছেন বয়স্ক ভাতা!

মৃত ২৬ জন নিয়মিত তুলছেন বয়স্ক ভাতা!

মো. মাসুম মিয়া, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৩:৩৩

বিরাহিমপুর গ্রামের আজাহের ৯ বছর আগে এবং নার্গিস বেওয়া মারা গেছেন দুই বছর হলো। কিন্তু তাদের নামে নিয়মিত তোলা হচ্ছে বয়স্ক ভাতার টাকা। শুধু আজাহের ও নার্গিসই নন, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ২নং ঘাটাইল ইউনিয়নের বয়স্ক ভাতার তালিকায় তাদেরসহ ২৬ মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের নামে নিয়মিত ভাতার টাকা তোলা হচ্ছে। অথচ মৃতদের পরিবারের দাবি, ভাতার টাকার বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। তাদের নামে সরকারের বরাদ্দকৃত এ টাকা কে নেন? এমন প্রশ্ন মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই ইউনিয়নের ভাতাপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর করেন। এতে মোট বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৬৩৩ জন। ব্যাংক গতকাল বুধবার থেকে এ ভাতার টাকা দেওয়া শুরু করেছে। ভাতাভোগীদের তালিকা ধরে ওই ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভাতা প্রদানে নানা অসঙ্গতির তথ্য। মৃত ব্যক্তির নামে ভাতা উত্তোলন, একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই আছেন, বয়স হয়নি তবুও মিলেছে ভাতার কার্ড। শাহপুর গ্রামের আমিনা মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তার ছেলে জুলহাস বলেন, মা যে বয়স্ক ভাতা পেতেন তাই তো জানি না।
একই মন্তব্য মৃত আজাহেরের ছেলে হাফেজ মনির হোসেন ও নার্গিস বেওয়ার বোন খোদেজারও। মনির বলেন, 'বাবা মারা যাওয়ার পর ভাতার কার্ড কে নিয়ে গেছে, কোথায় আছে আমরা কিছুই জানি না। তবে জানতে ইচ্ছে করছে বাবার নামে আসা এ টাকা ব্যাংক থেকে তোলেন কে?' খোদেজা বলেন, 'খলিল মেম্বার আইয়া কার্ড নিয়া গেছে। তারপর আর কিছুই জানি না।' তবে ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার খলিলের ভাষ্য, 'আজাহের মারা গেছেন আমি মেম্বার হওয়ার আগেই। ওই কার্ডের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে নার্গিস বেওয়ার কার্ড আমার কাছে আছে।' জুলহাস, মনির ও খোদেজার মতো সবাই জানতে চান, মৃত ব্যক্তির নামে বরাদ্দকৃত টাকায় কার পকেট ভারি হচ্ছে।
ঘাটাইল ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কারিগরি প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাসরিন সুলতানা বলেন, সংশ্নিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা মৃত্যু সনদ প্রদানের মধ্য দিয়ে তাদের হাত হয়েই ভাতাপ্রাপ্ত মৃত ব্যক্তির কার্ড আমাদের হাতে আসে। প্রতিস্থাপনের তালিকাও তারা দিয়ে থাকেন।
উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জিএম বলেন, বয়স্ক ভাতা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে ঘাটাইল ইউনিয়নের উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি আমি। কিন্তু এ কাজে চেয়ারম্যান হায়দার আলী আমাকে সঙ্গে রাখেন না। ভাতাভোগী কেউ মারা গেলে সেই কার্ড চেয়ারম্যান নিয়ে নেন এবং সেই টাকা তিনি নিজেই ভোগ করেন। এমন অভিযোগে অবশ্য বিস্মিত ঘাটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হায়দার আলী। পুরো বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, 'মৃত ব্যক্তিদের নামে বয়স্ক ভাতার টাকা তোলা হয় আমার জানা নেই। আপনি ওই লোকদের (মৃত) একটা তালিকা নিয়ে আমার কাছে আইসেন।' তবে  চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের কিছুটা ভিন্নতা পাওয়া যায় অগ্রণী ব্যাংক ঘাটাইল শাখার ব্যবস্থাপক শামছুল হকের বক্তব্যে। তিনি বলেন, 'যারা সশরীরে ভাতার বই নিয়ে উপস্থিত হন, আমরা তাদের ভাতার টাকা দিয়ে থাকি। এ ছাড়া কেউ জীবিত আছেন কিন্তু অসুস্থ, সে ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন দিলে আমরা সেই লোকের টাকা দিয়ে দেই।
একই তথ্য পাওয়া গেল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুল ইসলামের কথায়। তিনি বলেন, যতক্ষণ না চেয়ারম্যান আমাদের মৃত ব্যক্তির তথ্য ও বই ফেরত দেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। মৃত্যুসনদ দেন চেয়ারম্যান। আর ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভাতাপ্রাপ্তদের শনাক্ত করে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক। প্রতিটি ইউনিয়নে সব ধরনের ভাতার সভাপতি থাকেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, এমন কিছু হয়ে থাকলে তদন্ত করে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×