অপপ্রচার রোধ, সরকারের সাফল্য তুলে ধরার নির্দেশ

বাহরাম খান
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৪:০৮
যে কোনো ধরনের সংকট মোকাবিলায় সচিবদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মাসে অনুষ্ঠিত সচিব সভা শেষে লিখিত নির্দেশনায় এ কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ২৪টি নির্দেশনায় একগুচ্ছ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী বছর এবং অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা সামনে রেখে সচিবদের এমন নির্দেশনার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব সভার আনুষ্ঠানিক নির্দেশ ইতোমধ্যে সব সচিবের কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে দেশে সচিব ও সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ৮৬ জন।
নতুন বছরে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যাতে সংকটে না পড়ে, সে অনুযায়ী আগাম সতর্কতামূলক সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সচিবদের কাছে পাঠানো নির্দেশনার প্রথম দফাতেই খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, 'খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে। যব, কাউন ইত্যাদি ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।' একই সঙ্গে কৃষি, বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে বলা হয়েছে।
এছাড়া গাড়ি বা অন্য কোনো দ্রব্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। ডিজিটাল অপপ্রচার রোধে কঠোর দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে যুব সমাজকে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। জঙ্গি বা সন্ত্রাসীরা যেন দেশের ভেতরে অর্থ ও আশ্রয় না পায় সে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুব সমাজকে সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদমুক্ত রাখার পাশাপাশি খেলাধুলার চর্চা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করার বিপরীতে উপযুক্ততা ও সম্ভাব্যতা বিবেচনায় আমদানি পণ্যগুলো দেশেই উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আনার প্রচেষ্টা জোরদার এবং বিনিয়োগ প্রস্তাব দ্রুত কার্যকর করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে। তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্যান্য পণ্য, যেমন আইসিটি ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংকট রোধে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার পাশাপাশি জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হবে। বিমানবন্দরের উপযুক্ত স্থানে সোলার প্যানেল স্থাপন করার পাশাপাশি সেচযন্ত্র সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
উন্নয়ন প্রকল্প নির্বাচন অগ্রাধিকারভিত্তিক হতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করতে হবে। বিদেশি সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
খাসজমি ও ঘর প্রদানের মাধ্যমে একজন মানুষও যাতে ঘরহীন বা ভূমিহীন না থাকে তা নিশ্চিত করতে সংশ্নিষ্টদের গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-২০৩০ ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এর লক্ষ্য অর্জনে সব মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (এমওইউ) ফলোআপ করতে হবে। সম্পাদিত এমওইউ ঠিক সময়ে কার্যকর হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করতেও সচিবদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নের তথ্য ওয়েবসাইটে আপডেট রাখতে বলা হয়েছে। নিয়মিত কার্যকর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্য বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্লুইসগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে সংশ্নিষ্টদের কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ জলাবদ্ধতার কারণে উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে। সর্বস্তরে সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
রেলপথের নিয়মিত সংস্কারসহ নিরাপদ ও সচল রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেলের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি সঠিক ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পৃথক বৈঠক করে সচিব সভার সিদ্ধান্তগুলো সংশ্নিষ্টদের জানানো এবং বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সচিব কমিটির বৈঠক আজ :এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সচিব সভার পর আজ মঙ্গলবার দুপুরে আবারও সচিব সভার ফলোআপ বৈঠক বসবে। বৈঠকে কোনো এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়নি।
সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া লিখিত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কী ধরনের দায়িত্ব, কী উদ্যোগ নেওয়া যায় সেসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে আজকের বৈঠকে।
একজন সচিব সমকালকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাঠানোর পর সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব বিষয় অনেক সময় বুঝে উঠতে পারে না। অনেকে একই দায়িত্ব অন্যদের বলে মনে করে উদ্যোগ নেন না। এসব বিষয় পরিস্কার করতে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। সেই সঙ্গে একই বিষয়ে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উদ্যোগ নেওয়া দরকার হলে সেসব বিষয়েও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সচিবদের দেওয়া হবে।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। এ বৈঠকটি তাঁর বিদায় উপলক্ষে এগিয়ে আনা হয়েছে। সাধারণত সচিব সভা হওয়ার পরপরই এত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বৈঠক হয় না। বছরে দুই বার সব সচিবকে নিয়ে সভা হয়। এতে সাধারণত প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন। তবে যে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন না, সে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আজকের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব।