ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

'জীবন্ত' হয়ে আছে স্মৃতি

'জীবন্ত' হয়ে আছে স্মৃতি

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি ব্যবহূত গাড়ি - সংগৃহীত

লতিফুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:৩০

শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ও তাঁর স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা ও আর্থিক সহযোগিতা করতেন। জাতির এ মেধাবী সন্তানকে ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে আলবদর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। তিনিসহ আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী ফজলে রাব্বির স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে তাঁর ব্যবহূত গাড়ি, রক্ত মাপার যন্ত্র আর পরিহিত শার্ট মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রাখা আছে। ডা. রাব্বি এ গাড়িতে করে মুক্তিযুদ্ধকালীন আহত অনেক জীবন বাঁচিয়েছেন। শুধু তাঁর স্মৃতি নয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যত্ন করে সংরক্ষণ করা হয়েছে এমন অনেক শহীদের স্মৃতিচিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে বিজয় ঘনিয়ে আসার আগে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশায় সারাদেশে সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তানি আর আলবদর বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে তাঁদের মধ্যে অনেকের ক্ষতবিক্ষত লাশ মিললেও খোঁজ মেলেনি অনেকের।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, গ্যালারি ৪ ও ৫-এ আছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নেওয়া শিক্ষক, সাহিত্যিক, ডাক্তারসহ বুদ্ধিজীবীদের জীবনের স্মৃতি অংশ। গ্যালারিতে 'বুদ্ধিজীবী' হত্যা নামে এ অংশ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিচিহ্ন বিজড়িত। গ্যালারির শুরুতেই আছে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপুরুষ নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী মুনীর চৌধুরীর কারাগারের দিনপঞ্জি। এ সাহিত্যিককে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। পরে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁর কারাগারের দিনপঞ্জির সঙ্গে আছে চট্টগ্রাম ও ফরিদপুর কারাগারে থাকাকালীন কলকাতায় ছবি বসুকে লেখা শহীদুল্লাহ কায়সারের চিঠি।
শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের সাহিত্য পত্রিকা শিলালিপি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক

সিরাজউদ্দিন হোসেন, স্ত্রী ও পুত্রসন্তান রেজা নূরের সঙ্গে দুটি আলোকচিত্র আর তাঁর লেখা ইতিহাসের বই 'ইতিহাস কথা কও'-এর একটি কপি সংরক্ষিত আছে। আছে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা জেনারেল ফরমান আলীর অফিস কক্ষ থেকে উদ্ধার বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা সংবলিত চিঠি আর ডায়েরির পাতা।

শহীদ ডা. আবুল ফায়েজ মোহাম্মদ আব্দুল আলিম চৌধুরী ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ভাষাসংগ্রামী এ বুদ্ধিজীবীকে ১৫ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। এ বুদ্ধিজীবীর ব্যবহূত পাঞ্জাবি রাখা আছে এ জাদুঘরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলামের ব্যবহূত কলম আর সিল সংরক্ষিত আছে এ জাদুঘরে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের পাঞ্জাবি আর মানিব্যাগটাও জাদুঘরের এ গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া ঢাবি শিক্ষক আবুল হাসেম মিয়ার ব্যবহূত টর্চলাইট আর ডা. আজহারুল হকের ব্যবহূত ছাইদানি, বিসিএসআইআরের কর্মকর্তা শহীদ ড. আমিন উদ্দিনের ব্যবহূত অ্যাস্ট্রে আর কাঁচি জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ব্যবহূত কলম আর সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্যের স্মৃতিচিহ্নও।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক সমকালকে বলেন, এখানে সংরক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিচিহ্নগুলো ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আর সৃজনশীল কাজের অংশ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রারম্ভ থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার থেকে এসব স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুনবাগিচা থেকে আগারগাঁওয়ে আসার পরও অনেকে স্মৃতিচিহ্ন দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

×