ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে ইসি

হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে ইসি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:৩৪

ভোটারদের অধিকার প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া। নির্বাচন কমিশন যাচাই করে না বলেই প্রার্থীরা হলফনামায় মনগড়া তথ্য দেন। দুর্ভাগ্যবশত কোনো নির্বাচন কমিশনই হলফনামা যাচাই-বাছাই করেনি, দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটের ডেইলি স্টার ভবনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব মত দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। পরে গত দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে প্রকাশিত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বক্তব্য দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি সৈয়দ নাসের বখতিয়ার, নির্বাচন বিশ্নেষক আব্দুল আলীম প্রমুখ।

সাবেক সিইসি আবু হেনা জানান, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অংশগ্রহণমূলক না হলে তাকে নির্বাচন বলা যায় না; সেটি অর্থহীন নির্বাচন। বর্তমান কমিশনকে কাজের মাধ্যমে আস্থা অর্জনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'কাজ দিয়ে কমিশনের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান হতে হবে। এটি এখনই শুরু করা দরকার। শুধু আপনারা আসেন বললে চলবে না। সবাইকে দেখাতে হবে কমিশন নিরপেক্ষ।'

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনের সময় সিইসি ছিলেন আবু হেনা। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ১১৬ আসন নিয়ে বিরোধী দল হয় বিএনপি। দেশে সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পর সেটিই প্রথম নির্বাচন। যদিও আবু হেনা পাঁচ বছর মেয়াদের এক বছর থাকতেই পদত্যাগ করেন। টাঙ্গাইল উপনির্বাচনের অনিয়মে তিনি ব্যাপক ক্ষুব্ধ এবং দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন।
আবু হেনা বলেন, 'সংবিধান অনুযায়ী ইসি স্বাধীন। ইসির দায়িত্ব নির্বাচন সুষ্ঠু করা। বিধিবিধান ও আইন তাকে ক্ষমতায়িত করেছে। আইনে যেসব অস্পষ্টতা আছে, ইসি তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমাধান করতে পারে। কারণ, নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইসির। আস্থা অর্জনে তারা ব্যর্থ হলে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে না।'

সাবেক এই সিইসি বলেন, 'সবাইকে নিয়ে নির্বাচন- এটিই তো সুষ্ঠু। নির্বাচন কমিশন তাদের দাওয়াত দিতে পারে, ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে পারে। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কাউকে ফেলে দিতে পারেন না, কাছে ডাকতে হবে।' ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ভোট উৎসবে পরিণত হয়েছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এ পরিবেশ করতে সফল হয়েছিলাম।'

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আরপিওতে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তির কথা আইনে স্পষ্ট করা নেই। প্রার্থীর হলফনামা যাচাই করার সক্ষমতা ইসির নেই।' নিজের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'ওই সময়ে প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী এনবিআরে পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। ভোট ব্যবস্থা অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে বের করা না গেলে এসব করে কিছুই হবে না।'

বিগত সংসদ নির্বাচনে আগের রাতে ভোটে প্রসঙ্গ টেনে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'গেজেটের আগেই ইসির কাছে অভিযোগ পৌঁছানোয় ভোট বন্ধের সুযোগ তাদের ছিল। ভোটের পরদিন বিবিসি আগের রাতে বাক্সভরা ব্যালটের ভিডিও প্রচার করে। ক্ষমতা থাকার পরও সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা ভোট বন্ধ করেননি। এখন তিনি (নূরুল হুদা) বলছেন, পরে অভিযোগ পাওয়ায় কিছুই করার ছিল না। তাঁর এ উত্তর সঠিক হয়নি। গেজেটের আগে কমিশন অনুসন্ধান করতে পারে।' সাবেক সিইসি আবু হেনার সময়ে টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে গেজেট আটকে দেওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, 'তিনি (আবু হেনা) যত দিন ছিলেন, গেজেট করেননি।'

হলফনামার সঙ্গে আয়কর বিবরণী বর্তমান কমিশন কার স্বার্থে বাতিল করেছে- প্রশ্ন রেখে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'হলফনামার বর্তমান আট দফার ছকে পরিবর্তন আনা দরকার। শুধু অংশগ্রহণমূলক নয়, নির্বাচন হতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। নির্বাচনে প্রার্থী বেছে নেওয়ার বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থাকতে হবে।' তিনি বলেন, 'প্রার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে মনগড়া তথ্য দেন। কারণ তাঁরা জানেন, এসব যাচাই-বাছাই হবে না। অথচ মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল, এমনকি নির্বাচিত হয়ে গেলেও ফল বাতিল করতে পারে ইসি।'

নির্বাচন বিশ্নেষক ড. আব্দুল আলীম বলেন, 'প্রার্থীর হলফনামা কোনোভাবেই যাচাই করা যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যবশত কোনো নির্বাচন কমিশনই এটি করেনি। দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে।'

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×