আসকের বার্ষিক প্রতিবেদন
দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৯:১৩ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৯:১৩
দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নুর খান। তিনি বলেন, আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেকটাই মাকাল ফলের মতো। যেমন ধরুন, লেপে পেঁচিয়ে মানুষকে পেটানো হলে তার ভেতর রক্তক্ষরণ হবে, কিন্তু বাইরে থেকে কিছু বোঝা যাবে না।
২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে গতকাল শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়া আসকের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী বছরে সারাদেশে স্থানীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক কারণে ৪৭৯টি সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭০ জন। আহত হন ৬ হাজার ৯১৪ জন।
রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকা জেলায়। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বন্দুকযুদ্ধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন পাঁচজন।
নূর খান বলেন, বিচারবহির্ভূত সব তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। গুম, খুন ও অপহরণের ঘটনা বন্ধে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশন চিহ্নিত করবে, এ ধরনের তৎপরতার সঙ্গে কারা জড়িত। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।
আসকের নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, আমরা বিচারবহির্ভূত প্রতিটি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়। তাই প্রতিটি ঘটনার স্বাধীন তদন্ত হওয়া দরকার।
বিদায়ী বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আসকের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংস্থার পরিচালক নিনা গোস্বামী ও সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির। এ সময় ১৪ দফা সুপারিশও তুলে ধরেন তাঁরা।
আসকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৯৪টি। খুন হয়েছেন ১২৬ নারী। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৩৬ জন। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১২ নারী। শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪৫টি। এ ধরনের ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৭৪ শিশু।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আটটি বিভাগের মধ্যে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগেই মামলা হয়েছে ২ হাজার ২৪৯টি। ২১০ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন একজন সাংবাদিক। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাধার শিকার হয়েছেন ১৪ জন।
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ী বছর সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৩ জন। গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৩৬ জন। কারা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। এ ছাড়া ২০২২ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকারকর্মী নুর খান বলেন, আসামিদের যাকে কারাগার, ডিটেনশন সেন্টার বা ইন্টারোগেশনের (জিজ্ঞাসাবাদের) জন্য যেসব গোপন জায়গা রয়েছে, সেগুলো বন্ধ করা উচিত। আমাদের আইন ও সংবিধানে এগুলো অবৈধ।
- বিষয় :
- আসক
- আইন ও সালিশ কেন্দ্র
- মানবাধিকার