ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

অভিজিৎ হত্যার ৮ বছর

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার জঙ্গি ধরাছোঁয়ার বাইরে

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার জঙ্গি ধরাছোঁয়ার বাইরে

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের আট বছরেও গ্রেপ্তার হয়নি এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া ও আকরাম হোসেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানামুখী তৎপরতা ও পুরস্কার ঘোষণার পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন তাঁরা। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ঢাকার আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তাঁরা হলেন- মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব।
২০১৫ সালের এই দিনে অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ-সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার একটি আদালত। রায়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান মেজর জিয়াসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম ছাড়া অপর চারজন তখন কারাগারে ছিলেন।
এদিকে এখন পর্যন্ত অধরা জিয়া ও আকরাম দেশে আছেন, নাকি বিদেশে পালিয়েছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের ধরতে ২০২১ সালের শেষ দিকে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ২০১৬ সালে পুলিশ সদরদপ্তর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।
এ ছাড়া ঢাকার আদালত চত্বর থেকে গত বছরের ২০ নভেম্বর ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকেও তিন মাসে ধরতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে তারা দেশ ত্যাগ করতে পারেনি বলে ধারণা সংশ্নিষ্টদের। র‌্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের তথ্যমতে, এখনও তারা দেশে আছে।' জঙ্গিরা প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত জিয়ার যাতায়াত সম্পর্কে কিছু তথ্য তদন্ত সংশ্নিষ্টদের কাছে ছিল। অন্তত চারটি অভিযানে কাছকাছি গিয়েও অল্পের জন্য তাকে ধরা যায়নি। এর মধ্যে ঢাকার বাড্ডার সাঁতারকুলের একবার প্রায় ধরা পড়েই যাচ্ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে ছিলেন। ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের আগে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকায় আসার টিকিট কাটতেও গিয়েছিলেন। টিকিট না পেয়ে সেখানে হট্টগোল করেছিলেন বলেও জানা যায়।
জঙ্গি দমনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই কোনো জঙ্গি সংগঠনের। তবে অনুকূল পরিবেশ পেলে তারা যে কোনো সময় ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এ কারণেই আনসার আল ইসলামের মতো সংগঠনের ওপর তারা নিয়মিত নজরদারি করছেন।
এর মধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলায় বোমা হামলা হুমকি দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয় আনসার আল ইসলামের নামে। এ প্রসঙ্গে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চিঠি দিয়ে জঙ্গি হামলার কোনো নজির বাংলাদেশে নেই। তবুও এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুনে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যার ঘটনায় আনসার আল ইসলামের নাম আসে। বাচ্চুর ঘটনার পর দেশে বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। পরে বেরিয়ে আসে পুরাতন জেএমবি, নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের সদস্যরা একত্রিত হয়ে ওই হামলা চালায়।
whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×