ঢাকা শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাধিক গুজব ছিল ফেসবুকে

কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাধিক গুজব ছিল ফেসবুকে

রোববার গভীর রাতে মুখোশধারীদের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের প্রায় সব কক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খোয়া গেছে মূল্যবান জিনিসপত্র- সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০১৮ | ১০:০৬ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ | ১০:০৯

কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত কয়েকদিন ধরেই সরগরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সরব ছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সুযোগ বুঝে আন্দোলনকারীদের এ প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়েছেন গুজব রটনাকারীরা।

আন্দোলনের সময় বড় ধরনের অন্তত তিনটি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় ফেসবুকে। এরপর‌ই দফায় দফায় উত্তেজনা দেখা দেয় এবং আন্দোলন সময়ে সময়ে নতুন মাত্রা পায় বলেই মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে টানা আন্দোলন শুরু হয়। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল তা সহিংস রূপ নেয়। এদিন পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পদযাত্রা শেষে শাহবাগ মোড় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়।

পুলিশি তৎপরতায় টিকতে না পেরে রাত ৮টার দিকে শাহবাগ মোড় ছেড়ে ক্যাম্পাসের দিকে এগোতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের।

এরপর হঠাৎ করে ফেসবুকে আবু বকর নামের একজনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার খবর রটিয়ে দেওয়া হয়। মুহূর্তেই তা শেয়ার হতে থাকে ফেসবুক গ্রুপ ও বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে।

রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী। আবাসিক হল থেকে গেট ভেঙে বেরিয়ে আসেন ছাত্রীরাও। রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিতে থাকেন তারা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে চলে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। ছাত্রলীগের সাথে কোথাও কোথাও তাদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

তবে এরই মধ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেই মৃত্যুর গুজব উড়িয়ে দেন বকর। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক আহত আবু বকরকে সঙ্গে নিয়ে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এরপরের গুজবটি ছড়ানো হয় সোমবার রাতে। আন্দোলনকারীরা পরবর্তী দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করে আবাসিক হলে ফিরে গেলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ভুয়া তথ্য।

রাত ১০টা বা তার কিছু সময় পরই ফেসবুকের কিছু গ্রুপে বলা হয়, 'হলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে' আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। হলের গেস্টরুমে ছাত্রদের ডেকে ধরে ধরে মারধর করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

এসময় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। অনেকেই স্ট্যাটাস দিতে থাকেন বিষয়টি নিয়ে। আতঙ্কের কথা জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় ছাত্রলীগের ওপর। পরে দেখা যায়, ভিডিওটি আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্ত ৭টি কলেজকে বাদ দেওার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়কার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সর্বশেষ গুজবটি রটে মঙ্গলবার রাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে এক ছাত্রীকে মারধর ও তার রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফত জাহান এশার বিরুদ্ধে। হঠাৎ করেই ফেসবুকে রক্তাক্ত একটি পায়ের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গ্রুপে এ নিয়ে পোস্ট দেওয়া হয় তাৎক্ষণিকভাবে। পোস্টে দাবি করা হয়, রগ কেটে দেওয়া হয়েছে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারী মুর্শিদা আক্তারের পায়ের। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ওই ঘটনার।

এরপরই গভীর রাতে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা এবং নানা স্থান থেকে আন্দোলনকারীরা সুফিয়া কামাল হলের গেইটের সামনে অবস্থান নিতে থাকেন। ভেতরেও ক্ষোভে ফুসে ওঠেন ছাত্রীরা। এক পর্যায়ে কেন্দ্র্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এশাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কার করা হয় হল থেকেও। ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে এশাকে এ ঘটনায় দায়ী করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এরপরই বেরিয়ে আসে রগ কাটা নয় বরং আন্দোলনকারী নিজেই ক্ষোভে জানালায় আঘাত করলে তার পা কেটে যাওয়ার তথ্য। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য আসে মুর্শিদারও। সেখানে তিনি রগ কেটে নয় আঘাত লেগে তার পা কেটে যাওয়ার কথা জানান।

ঢাবি ভিসির বাসভবনে তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও প্রবেশপথের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্নেষণ করছে পুলিশ।

সহিংসতার ধরন ও অন্যান্য আলামত বিশ্নেষণ করে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, তাণ্ডবের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। যারা হামলার আগে-পরে গুজব ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছে, তাদের শনাক্ত করছে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ বিভাগ। ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ এবং ভিসির বাসভবনে ভাংচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার চারটি মামলা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী সমকালকে বলেন, যারা ভিসির বাসায় হামলা করেছে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। হামলাকারীরা মুখোশধারী সন্ত্রাসী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলায় মুখোশধারীদের আসামি করা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সমকালকে বলেন,  ঘটনাস্থলের সিসিটিভি পাওয়া না গেলেও ক্যাম্পাসের অন্যান্য এলাকার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্নেষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজও দেখা হচ্ছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, হামলায় ছাত্রশিবিরসহ কোনো সুযোগ সন্ধানী গ্রুপের সংশ্নিষ্টতা রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

লাগাতার আন্দোলনের পর বুধবারই জাতীয় সংসদে সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করা সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।




whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×