ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

মর্মন্তুদ সেই দিন আজ

মর্মন্তুদ সেই দিন আজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৯:৪৪

'আজ এই ঘোর রক্ত গোধূলিতে দাঁড়িয়ে/ আমি অভিশাপ দিচ্ছি তাদের/ যারা আমার কলিজায় সেঁটে দিয়েছে/ একখানা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ'- গভীর বেদনায় দেশের প্রধানতম কবি শামসুর রাহমান তার কবিতায় বিচার চেয়েছিলেন হন্তারকদের। যারা বিজয়ের ঊষালগ্নে কেড়ে নিয়েছিল এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বছর ঘুরে পঞ্জিকায় আজ এসেছে ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবী নিধনের মর্মন্তুদ-স্মৃতিঘেরা দিন। বাঙালির মেধা-মনন-মনীষাশক্তি হারানোর দিন আজ। ইতিহাসের পাতায় কালো আখরে উৎকীর্ণ বেদনাবিধুর কৃষ্ণপক্ষ আজ। ৪৭ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে উঠেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যাযজ্ঞে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে জাতি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই ১৪ ডিসেম্বরের সেই কালরাতে বাঙালি মেধার নৃশংস এই নিধনযজ্ঞ চলে, যা হতবিহ্বল করে তুলেছিল বিশ্বকে।

১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয় ধিক্কারজনক এই কর্মকাণ্ড। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। পরে কৃতী এসব সন্তানের তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর দোসর কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। চূড়ান্ত নীলনকশার বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজও নিরূপণ করা যায়নি। তবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী-সাহিত্যিক-প্রকৌশলী।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।

যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ দিনটি পালিত হবে। মানুষের ঢল নামবে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিস্তম্ভে। অর্পণ করা হবে পুষ্পার্ঘ্য। সেইসঙ্গে এবারও জাতির প্রত্যাশা- শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে যারা এখনও বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে আছে অথবা বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলেও যারা পলাতক আছে, তাদের রায় কার্যকর করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে।

দেশের সর্বত্র আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়বে। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নিয়েছে নানা কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।

সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সরকারিভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধেও একইভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং সকাল সোয়া ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, ৭টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিএনপি সূর্যোদয়ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে- সকাল সোয়া ৬টায় উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, ৬টা ৩৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণের কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণের স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত।

এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করবে।



পরবর্তী খবর পড়ুন : তারাই আমাদের বাতিঘর

আরও পড়ুন

×