হাসপাতালে দ্বিগুণ ডেঙ্গু রোগী, বাড়ছে আতঙ্ক

আরাফাত ও রিয়াদ দুই ভাই। তারা দু’জনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। সোমবার রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা -মাহবুব হোসেন নবীন
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ | ০৫:৩৭
গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৮৮৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটি এক দিনে এ বছরের সর্বোচ্চ শনাক্ত। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও তিনজনের। এর আগে এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার ৮৩৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে গত মাসের শেষ ১০ দিনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জুনের শেষ ১০ দিনে ২ হাজার ৪১৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হন। আর জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৬৫ জন। এমন পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মশা মারতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৪৩-তে। গত এক দিনে মৃত তিনজনকে নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৭৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ২৫৩ রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ৮০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ১৭৩ জন। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দু’জন, মে মাসে দু’জন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বর্ষা-পূববর্তী জরিপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার ১২৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ৬০ জেলাতে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।
চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ডা. লিয়াকত আলী বলেন, আগামী আগস্টে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে পারে। তাই কারিগরি কমিটি গঠন করে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে একদিকে যেমন হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়বে, অন্যদিকে মৃত্যু আরও বেড়ে যেতে পারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও এখনও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে এখনও অনেক শয্যা খালি, তবে রোগী বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনে রাজধানীর মহাখালীর এক হাজার শয্যার ডিএনসিসি কভিড হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার তো সব কাজ করে দিতে পারবে না। সরকারের পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে মশা নিধন সম্ভব নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি করতে হবে।
- বিষয় :
- বাড়ছে আতঙ্ক
- ডেঙ্গু রোগী