জন্মনিয়ন্ত্রণ হার আট বছরে ৭২ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য

তবিবুর রহমান
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ | ০৫:৩৭
দেশে মানুষের চাপ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। বর্তমানে ১৭ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। ২০৬১ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ২০ কোটিতে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করতে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এ জন্য নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণে বাংলাদেশ জনসংখ্যা নীতি-২০১২ সংশোধনে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য কর্মমুখী শিক্ষার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক স্থাপন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সম্পৃক্ত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০২২-এর প্রতিবেদন বলছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গ্রহীতার চাহিদা অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান ও প্রাপ্তি এখনও অপ্রতুল। বর্তমানে দেশের ৬৪ শতাংশ মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এ হার ২০৩১ সালের মধ্যে ৭২ শতাংশে নেওয়া সরকারের লক্ষ্য। দেশে বর্তমানে প্রজনন হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই হারে পরিবর্তন হয়নি। এখন বছরে ৫৩ লাখ নারী গর্ভধারণ করছেন। প্রতি লাখ সন্তান জন্মের সময় ১৬৩ প্রসূতির মৃত্যু হয়। এ সংখ্যা ২০৩০ সালে ৭০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সংশোধিত নীতিতে দেশে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো, নারী ও পুরুষের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, সমতা আনা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতামুখী, নগর স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে আকৃষ্টকরণ, জনসংখ্যার সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে খসড়া জনসংখ্যা নীতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পরিবার পরিকল্পনায় প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমে। কিন্তু এই সেবা নিতে গিয়েই অনেককে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশের নারীরা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করতে পারেন না। এমনকি কখন সন্তান নেবেন, সে সিদ্ধান্তও নিতে পারেন না। প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ পরিবার পরিকল্পনার সেবা নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু সেখানে আমরা সেবা দিতে পারছি ৬২ শতাংশকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বিল্লাহ হোসেন বলেন, ২০৬১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যতে নামতে পারে। পরের বছর থেকে তা ঋণাত্মক হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হলে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, কীভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে– তার পরিকল্পনা এখনই করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগে মহাপরিকল্পনা নিয়ে জন্মহার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মৃত্যুহার কমানো এবং জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। তাদের জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে কর্মদক্ষতা সৃষ্টি, কর্মদক্ষতার উন্নয়ন, কর্মমুখী শিক্ষার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। নতুন জনসংখ্যা নীতিতে এ বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বলতে শুধু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নয়, জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনাও। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বাল্যবিয়ে ও অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে নারীশিক্ষা ও ক্ষমতায়ন জরুরি। পাশাপাশি বয়স্করা যাতে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে কাজ করতে পারে সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ভালো হলেও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য অবকাঠামো নেই। এ জায়গায় কাজ করতে হবে।
- বিষয় :
- বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস