ডেঙ্গু পরিস্থিতি
ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন রোগী বেড়েছে ৯ গুণ
তবিবুর রহমান
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগী বাড়ছে। ঢাকার বাইরে এই হার বেশি। গত এক মাসের ব্যবধানে ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৯ গুণ। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকামুখী হচ্ছেন রোগীরা। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে এডিস মশা নিধন কর্মসূচি না থাকা এবং চাহিদার তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সরঞ্জাম ঘাটতি থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১ হাজার ৭৫৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯২ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৫ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় আটজন ও ঢাকার বাইরে দু’জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৩ হাজার ৪৫৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৮ হাজার ১৯ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই এত মৃত্যু এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর গত ৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৫০৯ জন। এ সংখ্যা গতকাল দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৫৮-তে। ৩ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ১ হাজার ২২ জন। গতকাল এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৬৮ জনে। এ হিসাবে এই সময়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগী বেড়েছে চার গুণ। বর্তমানে সারাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ হাজার ২৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ চিকিৎসাধীন বরিশাল জেলায়; ৩৩৯ রোগী। এ ছাড়া পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মায়মনসিংহ, শরীয়তপুর ও নরসিংদীতে ১০০ থেকে ২০০ রোগী চিকিৎসাধীন। এসব জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালের সপ্তম তলায় (মেডিসিন বিভাগ) ওঠার দুই সিঁড়ির মাঝে ঠাঁই পেয়েছেন আব্দুল আজিজ। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি সেখানে ভর্তি হয়েছেন। জ্বর হওয়ার পর দুই দিন ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অবস্থা জটিল হলে চিকিৎসকরা ঢামেক হাসপাতালে পাঠান। এ হাসপাতালে ঢাকার বাইরে থেকে আসা আরও কিছু রোগী দেখা গেল। তাদের অনেকেই নিজ এলাকার চিকিৎসকদের পরামর্শে এসেছেন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে এই হাসপাতালে ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগী বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৩০৮ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এ বছর ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৫ জন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন অধিকাংশ রোগী। এ কারণে সুস্থ হতে সময় লাগছে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক পরে দেখা দিয়েছে। জেলা-উপজেলায় যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশ নতুন রোগী। এ ছাড়া এসব এলাকার চিকিৎসকদের ডেঙ্গু রোগীর ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতা কম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও মশা গবেষক অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকার বাইরেও এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। জেলা-উপজেলায় অধিকাংশ মানুষ প্রথম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় অনেক রোগী হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত জটিল রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা ও সুস্থ করার ক্ষেত্রে রোগী ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু
ডেঙ্গুতে রুদ্র সরকার নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রুদ্র জবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন।
শিশুর মৃত্যু
ডেঙ্গুতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার খন্দকার ঈয়াশা সুলতানা ফাইহা নামে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মারা গেছে। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তার মৃত্যু হয়।
- বিষয় :
- ডেঙ্গু পরিস্থিতি