ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

বিসিএস তথ্য ক্যাডার

সাত বছর ধরে ঝুলছে পদ সৃষ্টি ও মান উন্নীত প্রস্তাব

সাত বছর ধরে ঝুলছে পদ সৃষ্টি ও মান উন্নীত প্রস্তাব

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১৯:২৫

পদ সংকটের কারণে বছরের পর বছর একই পদের ঘানি টানতে হচ্ছে তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো তারাও পিএসসির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের একই ব্যাচের কর্মকর্তারা দ্রুত পদোন্নতি পেলেও ঠিক সময়ে তা পাচ্ছেন না তথ্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তরা।

২০১১ সালের আগস্টে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন পদ সৃষ্টি, পদ বাড়ানো ও পদের মান উন্নীতের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এতে এই অধিদপ্তরের বিদ্যমান পদ (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি) সংখ্যা ৩৭০ থেকে ৫৭৪টি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। জনপ্রশাসন থেকে তখন কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হলে তথ্য মন্ত্রণালয় সেসবের উত্তরও পাঠায়। এ সময় একটি পদ গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়। কিন্তু তার পর থেকে সাত বছর ধরে অন্য বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রস্তাবটি ঘুরপাক খাচ্ছে। কবে এগুলো বাস্তবায়ন হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এ কারণে ক্যাডার লাইন পোস্টে সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা থাকার পরও অনেকেই সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা পদ থেকে আবেদন করে পদোন্নতি হিসেবে প্রশাসনে উপসচিব হওয়ার অপশন বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করে প্রশাসনের কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপসচিব হিসেবে যোগ দিতে হচ্ছে এই সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তাদের। লাইন পোস্টে ওপরের দিকে পদের সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় অনেক সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা চাকরির দেড় যুগের বেশি সময়েও পদোন্নতির মুখ দেখতে পারছেন না। শুধু সিনিয়র স্কেল নিয়েই শান্ত থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে তথ্য ক্যাডারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করা হলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রচারে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হবে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।

বর্তমান সরকারের আমলে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা পদ গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও গত বছর উপপ্রধান (পরিচালক), সিনিয়র উপপ্রধান ও সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা পদে মোট ২৫ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা (গ্রেড-৩) দেওয়া হয়নি। চতুর্থ গ্রেডেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তারা। কয়েক বছর আগে থেকে পদ সৃষ্টি ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তার মতো আরও দুটি পদ গ্রেড-১ সৃষ্টির দাবি করে আসছেন তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তারা। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

তথ্য কাডারের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তথ্য অধিদপ্তরসহ তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের কাজের অধিক্ষেত্র হিসেবে যেসব দপ্তর ও অধিদপ্তর রয়েছে, সেখানে পদসংখ্যা সীমিত। যৌক্তিক সমাধান হিসেবে পদ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। এটি হলে বিদ্যমান সমস্যার অনেকাংশে সমাধান হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্নিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রশাসনে গিয়ে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছেন। অথচ তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এই মন্ত্রণালয়ে সচিব করা হয় না। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির কোটায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর আইসিএস ও ইপিসিএস কর্মকর্তারা তথ্য ক্যাডারে কাজ করেছেন। ১৯৮২, ৮৪, নবম, ১৩তম, ১৮তম ও ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও এই ক্যাডারে কর্মরত। এসব ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অনেকেই একই সময় কাজে যোগ দিয়ে অনেকেই সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব হয়েছেন। কিন্তু তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যথাস্থানে পদায়ন ও পদোন্নতি পাওয়া নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেকেই কমবেশি হতাশা নিয়ে অবসরে চলে গেছেন। সিনিয়ররা পদবঞ্চিত হওয়ায় জুনিয়ররাও হতাশায় রয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, পদ সৃষ্টি ও আপগ্রেডেশন যেখানে সেখানে করা সম্ভব নয়। তাদের পাঠানো প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হয়। এর পর কিছু বিষয় সম্পর্কে জবাবও চাওয়া হয়। উত্তর স্পষ্ট কিংবা যথার্থ না হওয়ায় কিছু বিষয় আবারও জানতে চাওয়া হয়।

আরও পড়ুন

×