২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর
১৩ দিন পর জ্ঞান ফিরলে ছোট ভাইকে দেখি

মাহবুবা পারভিন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০৭:৫৬
‘ঢাকায় সমাবেশ, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। যোগ দিতে সাভারের স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেককে বললাম। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি জানিয়ে তারা রাজি হলেন না। মন মানল না। বেলা ১১টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে ৭০০ টাকায় প্রাইভেটকার ভাড়া করে একা রওনা হলাম। তিন ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশস্থলে যাই। এর পর ঠেলেঠুলে স্টেজের সামনে অবস্থান নিই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো নেত্রী শেখ হাসিনার (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা) বক্তব্য শুনছি। বক্তব্যের শেষ দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ। এর পর আর কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে হাসপাতালের বিছানায় প্রথমে পাশে ছোট ভাই তছলিমকে দেখি।
পরে জেনেছি, ততদিনে ১৩ দিন গেছে; আমি কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে।’– এভাবেই ২১ আগস্টের বিভীষিকার বর্ণনা দিলেন তৎকালীন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক (বর্তমানে ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি) মাহবুবা পারভিন। তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার কী হয়েছিল, তা ভালো বলতে পারবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশীষ কুমার।’
মাহবুবা পারভিনের বিষয়ে তখনকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য (বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা) আশীষ কুমার মজুমদার বলেন, বিকট বিস্ফোরণের মধ্যে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। আমরা বায়তুল মোকাররমের সামনে চলে যাই। শুনতে পাচ্ছি, নেত্রীর ওপর বোমা হামলা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পার্টি অফিসের সামনে গিয়ে শুধু জুতা আর জুতা পড়ে থাকতে দেখি। হতাহতদের সন্ধানে ছুটে গেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ সময় ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ ফোন করে মাহবুবা পারভিনের মৃত্যুর খবর দেন। তাঁর লাশ নাকি টিভিতে দেখাচ্ছে! কিছুক্ষণ পর মাহবুবার ছোট ভাই তছলিম ফোন করে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছি আর মাহবুবাকে খুঁজছি। লাশ ঘরে না পেয়ে দোতলায় গিয়ে বারান্দায় পড়ে থাকা অবস্থায় পাই। সবাই তাঁকে মৃত ভেবে ফেলে রেখেছে। হাতের ধমনী ধরে বুঝতে পারি, মাহবুবা জীবিত। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের বললে তারা টিকিট কেটে আনতে বলেন। রেগে গিয়ে যখন বললাম, আগে জীবন, না টিকিট? তারা সাফ জানাল– টিকিট। বুঝতে কিছু বাকি রইল না।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিচিত ছোট ভাই বিপ্লবকে সঙ্গে নিয়ে মাহবুবাকে নিচে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেল, পরে ট্রমা সেন্টারে যাই। অবস্থা খারাপ হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ডা. রিন্টু আমাদের মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু মাহবুবার অবস্থা খুবই খারাপ দেখে সেখানকার ডা. হারুনুর রশিদ ফোন করে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলে আমাদের পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) পাঠান। ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া মাহবুবার চিকিৎসা করতে করতেই পরিবারের লোকজন চলে আসেন। এর দুই দিন পর জানতে পারি, নেত্রী গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসার জন্য ভারত পাঠাচ্ছেন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতার পিএস নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মাহবুবার ঠিকানা ও পাসপোর্ট চান। আমি তছলিমের মাধ্যমে সব ব্যবস্থা করে ভাইবোনকে বিমানে তুলে দিয়ে আসি।’
- বিষয় :
- সাভার
- গ্রেনেড হামলা