কবি নজরুলের বাণী শুভ সুন্দরের দিকনির্দেশিকা

সাম্য ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্যক্তিগত জীবন ও সাহিত্যে ভাঙনের গান গেয়েছেন। কারণ নতুন সৃষ্টির জন্য ভাঙন প্রয়োজন। তিনি কাল অতিক্রম করে মহাকালকে স্পর্শ করে চলেছেন। তাঁকে নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। স্বার্থান্ধ মহল তাদের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে চেয়েছে। কিন্তু কোনো সীমানায় নজরুলকে আবদ্ধ রাখা যায়নি। গতকাল রোববার ৪৮তম প্রয়াণ দিবসে এমন নানা বিশ্লেষণ আর সর্বজনের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। র‍্যালি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যসহ সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন কবি পরিবারের সদস্যরাও।

শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে কবির নাতনি খিলখিল কাজী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, “জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান বাজানো হয় না। অথচ তাঁর গান দেশের যে কোনো সংকট মুহূর্তে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি জাতির পিতা রণসংগীত করেছিলেন। সেই গানও এখন সেভাবে গাওয়া হয় না। ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে’ গানটি জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহার করা দরকার। এটা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গান।”

এদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের সংকটে, সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে তিনি অফুরান এক প্রেরণার উৎস।’ বিএনপির পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কবির সমাধিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়।

এদিকে বাংলা একাডেমিতে আলোচনা সভায় বক্তারা নজরুলের জীবন ও সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে  কথা বলেন। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে ও উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নজরুলের পত্র পাঠ করেন বাচিকশিল্পী নূরন্নবী শান্ত।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘নজরুল প্রয়াণ দিবসে একটাই প্রত্যাশা– আমরা যেন নজরুলের সৃষ্টির মর্মবাণীকে ধারণ করে তাঁর যথার্থ উত্তরসাধক হতে পারি।’ বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘নজরুল আমাদের চেতনার বাতিঘর। তাঁর সৃষ্টি আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে সত্য, শুভ ও সুন্দরের পথে অনন্ত দিকনির্দেশিকা।’ আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল ও বাংলা একাডেমির সচিব ড. হাসান কবীর।