- বাংলাদেশ
- নতুন সরকারি কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
নতুন সরকারি কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
শিক্ষকদের আত্তীকরণে বিলম্ব, নিয়োগও বন্ধ

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ কলেজটি সরকারি করা হয়েছে ২০১৬ সালের ৩০ জুন। তা সত্ত্বেও বিসিএস ক্যাডার পদে চাকরি পাওয়ায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ কলেজ থেকে চলে যান পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক সুমাইয়া ফেরদৌস। সরকারি শর্তের কারণে তার স্থলে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, সরকারীকরণের আদেশে শর্ত দেওয়া হয় যে, নতুন করে আর কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
গত ১৭ ডিসেম্বর অবসরে যান এই কলেজের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক বিপুল চন্দ্র দত্ত। ২৯ জানুয়ারি অবসরে যাবেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম আরা বেগমও। তখন এসব শিক্ষকের ক্লাস নেওয়ার জন্য থাকবেন না কেউ। কলেজের প্রভাষক অসীম কুমার সমকালকে বলেন, দুই হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর এই কলেজটি শিক্ষক সংকটে ধুঁকলেও দেখার কেউ নেই। অবসর, পদত্যাগ ও শিক্ষকের মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হওয়া পদগুলো বছরের পর বছর ধরে শূন্যই থাকছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, এ অবস্থা সারাদেশের তিন শতাধিক কলেজের। এসব কলেজ সরকারি করা হলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের আত্তীকরণ না করায় তারা সরকারি হতে পারেননি। ফলে সরকারি হওয়ার সুযোগ পেয়েও সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বহু শিক্ষক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন। হতভাগ্য এই শিক্ষকরা সরকারি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি থেকে সদ্য সরকারি হওয়া কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কলেজ সরকারি হলেও শিক্ষকরা এখনও বেসরকারি। তাদের আত্তীকরণ প্রক্রিয়া দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অনেক শিক্ষক সরকারি হওয়ার আগেই অবসরে চলে যাচ্ছেন। দেশের অনেক উপজেলায় কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ ছিল না। সেখানে একটি কলেজ ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে তিন বছর আগে সরকারি করা হয়। এতে সারাদেশের ৩০২টি কলেজ ও প্রায় সমানসংখ্যক মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি হয়েছে। এরপর শিক্ষকদের 'কাগজপত্র যাচাইয়ের' নামে রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ সময় পার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয়করণের গেজেট হওয়া ৩০২ কলেজের মধ্যে ২২০টির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আরও ৭০টি কলেজের যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে 'ফাইল রাখার জায়গা না থাকায়' তা পাঠানো যাচ্ছে না বলে সংশ্নিষ্টরা জানান। মন্ত্রণালয় এখন শিক্ষকদের ডেকে যাচাই-বাছাই করছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২০টি কলেজের শিক্ষকদের কাগজ যাচাই শেষ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই শেষ হতেই আরও কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
জানা গেছে, এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদমর্যাদার মাত্র একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। ফলে সেখানেও দীর্ঘদিন লেগে যাবে।
সূত্র জানায়, জাতীয়করণকৃত কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫৬ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় চার হাজার। জাতীয়করণের সম্মতির পরই কলেজগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের সংগঠন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সংশ্নিষ্ট কলেজগুলো স্থানীয়ভাবে ভালো মানের বলেই সরকার এগুলো সরকারীকরণ করেছে। অথচ শিক্ষকদের আত্মীকরণ প্রক্রিয়া কেবলই দীর্ঘতর হচ্ছে। বিপরীতে নিয়োগ বন্ধ থাকায় শিক্ষক সংকটে কলেজগুলোতে একাডেমিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি জানান, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত, ময়মনসিংহের নান্দাইল শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজে বাংলা ও ইসলামের ইতিহাস, রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী সরকারি কলেজে রসায়ন, গণিত ও ব্যবস্থাপনা, বান্দরবানের সরকারি মাতামুহুরী কলেজে দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজে কৃষি শিক্ষা, ইসলামের ইতিহাস, রসায়ন, মার্কেটিং ও ব্যবস্থাপনা, দিনাজপুরের বিরামপুর সরকারি কলেজে রসায়ন, রাজশাহীর সারদাহ সরকারি কলেজে ইংরেজি, শেরপুরের হাজি জালমাহমুদ সরকারি কলেজে বাংলা ও হিসাববিজ্ঞান, নওগাঁর পোরশা কলেজে ইংরেজি ও কৃষি শিক্ষা, যশোরের শহীদ সিরাজ উদ্দিন হোসেন সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে একজন শিক্ষকও নেই।
এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সমকালকে বলেন, মাউশি থেকে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ থেকে শুরু করে এমপিও, একাডেমিক যোগ্যতাসহ সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সময় লেগেছে। অধিদপ্তরের কাজ শেষ প্রায়।
তিনি বলেন, দ্রুততার সঙ্গে আত্মীকরণ করা গেলে শিক্ষক সংকট দূর হয়ে যাবে। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পদ সৃষ্টি হয়ে গেলে প্রয়োজনে অন্য কলেজ থেকে শিক্ষক বদলি করে এনে এসব কলেজের শিক্ষক শূন্যতা দূর করা হবে।
মন্তব্য করুন